ইউরোপের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ভলতেয়ারের একটি বিশেষ উক্তি রয়েছে, ‘আমরা যদি খুব আনন্দদায়ক কিছু খুঁজে না পাই, তাহলে আমাদের অন্তত নতুন কিছু খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।‘
এই উক্তিটির মতো করে আমাদের অন্তর শত চেষ্টা করেও আনন্দদায়ক নতুন কিছু খুঁজে পায় না। পারিবারিক সমস্যা, কাজের চাপ, প্রিয় মানুষের সাথে সম্পর্কের অবনতি, স্বাস্থ্যের অবনতি, অর্থনৈতিক সমস্যা, কাছের মানুষের মৃত্যু এমন বিভিন্ন কারণে প্রতিনিয়ত মানুষ মানসিক চাপের শিকার হচ্ছে।
তারপরেও কিছু উপায় অবলম্বন করলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
নানাধরনের শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয় এই মানসিক চাপ থেকে। নিজেকে সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখতে প্রথমে মানসিক চাপ কমাতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানসিক চাপ একা একা সমাধান করার চেষ্টা করবেন না। চাপ নিয়ন্ত্রণে বন্ধু, পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের সাহায্য নিন। প্রয়োজনে মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
চলুন জেনে নেই এমন কিছু উপায়–
• মানসিক চাপ আমাদের খাবারের প্রতি অনিহা সৃষ্টি করে, খাবারের রুচি দিনের পর দিন কমতে থাকে। তাই পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে। যেমন– সুষম জাতীয় খাবার, শাক–সবজি, বিভিন্ন ফল।
• কর্মব্যস্ততায় যদি জিমে গিয়ে ব্যায়ামের সময় হয়ে না ওঠে তাহলে দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাটার অভ্যাস করতে অর্থাৎ ব্যায়ামের অভ্যাস তৈরি করতে হবে। কারণ ব্যায়াম মানসিক চাপ তৈরিকারী হরমোনের নিঃসরণ কমায় এবং এনডোরফিনের মাত্রা বাড়ায় যেটি সুখি হরমোন নামে পরিচিত।
• নিজেদের অনেক সমস্যার কথাই কারো সাথে শেয়ার করা সম্ভব হয়না বা কাউকে আমরা বিশ্বাস করতে পারিনা। এদিকে নিজের মাঝে কথাটি চেপে রাখার ফলে দিন দিন মানসিক চাপ বৃদ্ধি হচ্ছে এক্ষেত্রে ডায়েরি লেখা অনেক কজে দিতে পারে।নিজের ব্যক্তিগত সমস্যা গুলো ডায়েরি তে জমা করা যায়। তাই ডায়েরি লেখার অভ্যাস করতে হবে।
• নিজের কোনো ভুল অথবা অন্যে কারো ভুলগুলো ক্ষমা করে দেওয়া শিখতে হবে। বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। সফলতা না পেলে কোনো ভাবেই হতাশ হওয়া যাবেনা। পরবর্তীতে আরও সুযোগ আসবে এমন ধারনা রাখতে হবে।
• মানসিক চাপ সবচেয়ে বেশি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। অন্ততপক্ষে দৈনিক ৭–৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। এই অভ্যাস করার জন্যে অবশ্যই প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে।
• নিজেকে শিথিল রাখতে হবে। কোনো ভাবেই উত্তেজিত হওয়া যাবেনা। প্রয়োজনে পছন্দের গানটি শুনুন। অর্থ্যাৎ যে কাজটি করতে আপনি পছন্দ করেন সেই কাজটি করুন। যেমন আর্ট করা, সাজসজ্জা করা, বই পড়া, সিনেমা দেখা, কোনো সৃজনশীল কাজে মনোযোগ দেওয়া।
• শ্বাস–প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা যেতে পারে। যেমন– ৪সেকেন্ড ধরে শ্বাস ছাড়ুন এবং ৭ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখুন। শিস দেওয়ার মতো ভঙ্গি করে ৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। এই কৌশল টি ৪বার করুন। পেশি শিথিল করার জন্য শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করুন ৫–১০সেকেন্ড সময় নিয়ে। দৈনিক ১৫– ২০সেকেন্ড সময় নিয়ে কৌশলটি প্রয়োগ করুন।
• মেনে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু বিষয় পরিবর্তন করা যায় না। যেমন প্রিয়জনের মৃত্যু। চাইলেই তাকে আর ফিরে আনা সম্ভব নয়। প্রকৃতির অনেক কিছুই হাতেই থাকেনা।
• নিজের সাথে কথা বলতে হবে। একান্তে ভাবতে হবে কোন বিষয় গুলো মানসিক চাপ বৃদ্ধি করছে। কেনো এর থেকে বের হওয়া যাচ্ছেনা। প্রয়োজনে বিশ্বস্ত বন্ধুর সাহায্য নিন।
অনু/দীপ্ত সংবাদ