মঙ্গলবার, জানুয়ারি ৭, ২০২৫
মঙ্গলবার, জানুয়ারি ৭, ২০২৫

ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ করলে আগামী নির্বাচনে কী প্রভাব পড়বে?

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশের ভোটার হওয়ার বয়স বর্তমানে ১৮ বছর। তবে, সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৭ বছর বয়সে ভোটার করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তার এ মন্তব্যের পর দেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে এবং আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে নতুন এক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন জানায়, ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার প্রস্তাবের পর, ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছরে কমালে এই হালনাগাদ কার্যক্রমে নতুন জটিলতা তৈরি হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘যদি আইন পরিবর্তন হয়, তবে হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করতে কিছুটা দেরি হতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টার মতে, তরুণরা সংখ্যায় বেশি এবং তাদের মধ্যে পরিবর্তনের আগ্রহ রয়েছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য উপকারী হবে।

তিনি বলেন, ‘তরুণরা দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক আগ্রহী। তাদের অধিকাংশই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত। তাই ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর করার প্রস্তাব রাখছি।

প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এ ধরনের প্রস্তাব নির্বাচনের ওপর কালক্ষেপণ সৃষ্টি করতে পারে।

তবে জামায়াতে ইসলামী ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং তাদের মতে, তরুণরা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং তাদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা উচিত।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভোটার হওয়ার বয়স কমালে দেশে বিভিন্ন আইনে অসামঞ্জস্যতা তৈরি হতে পারে, যেমন ড্রাইভিং লাইসেন্স বা বিবাহ আইন, যেখানে ১৮ বছর বয়সের নিচে ব্যক্তিকে অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে গণ্য করা হয়।

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের চেয়ারম্যান মুনিরা খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এতে নতুন জটিলতা তৈরি হতে পারে, বিশেষত ভোটার তালিকায় বয়স কমানোর পর অন্যান্য আইনের সাথে সমন্বয়ের সমস্যা হতে পারে।

নির্বাচন কমিশন জানায়, তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কিন্তু ১৭ বছর বয়সে ভোটার হওয়ার প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে তা নির্বাচন কমিশনের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, কারণ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা শুরু হওয়ার পর ভোটার হওয়ার বয়স কমানোর ফলে তালিকা পুনরায় হালনাগাদ করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রস্তাবের পর, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদারও তরুণদের ভোটাধিকার দেয়ার পক্ষে কথা বলেছেন। তার মতে, তরুণরা বাংলাদেশে বিভিন্ন আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এবং তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দেয়াই উচিত।

এদিকে, ২০২৫ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে ভোটার হওয়ার বয়স কমানোর বিষয়টি আইনি পরিবর্তনের উপর নির্ভর করছে, এবং নির্বাচন কমিশন বিষয়টি নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে।

যতই সময় এগোচ্ছে, নির্বাচনী প্রস্তুতিও আরও জটিল হয়ে উঠছে। নতুন ভোটার তালিকায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ নতুন ভোটারের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে, যা নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বয়স কমানোর বিষয়ে আইনগত পরিবর্তন না হলে হালনাগাদ কার্যক্রম কিছুদিন পিছিয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তরুণদের ভূমিকায় পরিবর্তন, এবং নির্বাচনী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত নানা সংকটের মাঝে, ভোটার হওয়ার বয়স কমানো বা না কমানো, তা আগামী নির্বাচনের সময়সূচি এবং প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা।

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More