নীলফামারীর যুবক খাইরুল ইসলাম মালয়েশিয়ান প্রবাসী। চলতি সপ্তাহে বাড়িতে ফেরার প্রস্তুতির মধ্যেই তাকে অপহণের অভিযোগ উঠেছে মালয়েশিয়ায় কর্মরত তারই ছয় সহকর্মীর বিরুদ্ধে।
অপহরণের পরে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের।
খাইরুল ইসলাম জলঢাকা উপজেলার দক্ষিণ দেশীবাড়ি রাজারহাট এলাকার মো. আব্দুল হামিদের ছেলে। ৪ ভাই বোনের মধ্যে খাইরুল বড়। তার একটি ৭ বছরের ছেলে আছে বলে জানা গেছে।
সোমবার (২৪ জুলাই) দুপুরে মালশিয়ায় কর্মরত তার সহকর্মীর মোবাইল থেকে জানানো হয় খাইরুল নিখোঁজ। খবর পাওয়ার পর মালয়েশিয়ায় পরিচিতদের সাথে যোগাযোগ করে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা চালান খাইরুলের পরিবার। পরের দিন ভোর ৪ টায় মুঠোফোনে কল দিয়ে অপহরণের বিষয়টি জানান খাইরুল নিজেই।
খাইরুল পরিবারকে জানান, তার ছয় সহকর্মী একটি জঙ্গলে তাকে আটকে রেখে ২০ লক্ষ টাকা চেয়েছেন। নইলে তাকে হত্যা করে জঙ্গলেই ফেলে রাখা হবে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় অপহৃত খাইরুল ইসলামের সাথে। পায়ে শক্ত করে বাধা অবস্থায় জঙ্গলে ফেলে রেখে যাওয়ার কথা জানিয়ে খাইরুল বলেন, ‘আমার সহকর্মীরা আমাকে একটা জঙ্গলে বেধে রাখছে। তাদের নাম আমি পাঠিয়ে দিয়েছি। আমি ৩ দিন কিছু খাইনি। তারা বলে, ২০ লাখ টাকা দাও নইলে তোমাকে মেরে ফেলব। আমাকে জঙ্গলে এনে বন্ধি করে রেখেছে। এখানে জাহাজ ছাড়া দেখার কিছু নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এই জঙ্গল থেকে কিভাবে বের হব তা তো বলতে পারছিনা। এই জঙ্গলে তো বাঘ ভাল্লুক অনেক কিছুই আছে। ভাই আমাকে এখান থেকে দ্রুত উদ্ধার করে নিয়ে যান। কিভাবে উদ্ধার করবেন জানিনা। আমি ৩ দিন ধরে কিছু খাইনি। ৩ দিনের মধ্যে ২ দিন আমার সহকর্মীরা আসছিল আমার কাছে। আজ আসে নাই। এভাবে না খেয়ে থাকলে আমি শেষ হয়ে যাব।’
খাইরুলের ভাগ্নী আমিনা খাতুন বলেন, ‘আমার মামা ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ায় যান। উনি এই সপ্তাহে বাড়ি আসার কথা বলেছিল। সোমবার দুপুরে আমাকে কল করে মামার এক সহকর্মী বলেন মামাকে ফজরের নামাজের পর থেকে নিখোঁজ। আজ ভোরে মামা কল দিয়ে জানায়, সে একটি জঙ্গলে পা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে। তার টাকা মোবাইল সব কেড়ে নিছে তার সহকর্মী পারভেজ তপু, সামিউর, রুহুল, মনজু, ও ছোটন। মামাকে উদ্ধার করে দেশের আমার ব্যবস্থা করা হোক।’
খাইরুলের ছোট বোন হালিমা বেগম বলেন, ‘আমার বড় ভাই ৫ বছর আগে গেছেন মালয়েশিয়ায়। আমার ভাইকে তার ৬ জন বন্ধু আটকে গাছের সাথে বেধে রেখে ২০ লাখ টাকা দাবি করেছে। নইলে ওরা আমার ভাইকে মেরে ফেলবে। আমার মা খুব অসুস্থ আমার ভাইকে দেখার জন্য। আমার দাবি আমার ভাইকে দেশে ফিরে আনা হোক। আর যারা এই কাজ করেছে তাফের শাস্তি দেওয়া হোক।’
খাইরুলের দুলাভাই আলী হোসেন বলেন, ‘আমার শ্যালক মালয়েশিয়ায় থাকে ৫ বছর তিন মাস হলো, সে আজ আসে কাল আসে এরপর সে ছুটি পাইছে তার মা অসুস্থের কারণে। তার যে বন্ধু ছিল ছয়জন তাকে আটকে রেখে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করছে। তাকে গাছের মধ্যে বেধে রেখেছে। টাকা না দিলে ছাড়বে না তাকে।’
নীলফামারীর পুলিশ সুপার গোলাম সবুর বলেন, ‘যেহেতু মালয়েশিয়ার ব্যাপার সে মিসিং হয়েছে কিনা আমরা কিভাবে এদেশ থেকে বুঝতে পারব। বিষয়টি দেশের হলে জিডি করলে আমরা খতিয়ে দেখতাম। তারপরও তার পরিবারের লোকজন থানায় একটা জিডি করুক। তার পরিবার যেন ছেলের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেন।’
শায়লা/ দীপ্ত নিউজ