সম্প্রতি ছয়টি জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের প্রবেশ মূল্য ৫ গুণ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে প্রত্যাহারের আহ্বান করেছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।
শনিবার (০৬ জুলাই) সকল জনসমাগমস্থল (পাবলিক প্লেস) সব বয়সী মানুষের জন্য উন্মুক্ত এবং বিনামূল্যে প্রবেশের দাবিতে এ আহ্বান করেছে পবা।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) থেকে রাজধানীর বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং বলধা গার্ডেনসহ কক্সবাজারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মৌলভিবাজারের লাউয়াছড়া ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, চট্টগ্রামের বাঁশখালী ইকোপার্ক ও ময়মনসিংহ মধুটিলা ইকোপার্কের প্রবেশ মূল্য ২০ থেকে ১০০ টাকা করা হয়েছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বন অধিশাখা–১ কর্তৃক এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
ঢাকাসহ সারাদেশে সর্বসাধারণের ব্যবহার উপযোগী নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দময় জনসমাগমস্থল (পাবলিক প্লেস) সীমিত। সেখানে বিভিন্ন লেক, পার্ক, উদ্যান কিংবা খেলার মাঠ ক্রমশ সাধারণের প্রবেশ বিভিন্ন উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। যা জনসাধারণের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। এসব কারণে মোবাইল ও নেশাসক্তসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। সুস্থ্য শারিরীক ও মানসিক বিনোদনের অভাবে শিশুরা কিশোর গ্যাং এর মতো ধ্বংসাত্মক কাজেও জড়িয়ে পড়ছে।
পবা মনে করে, সবধরণের উদ্যান ও উন্মুক্ত জনসমাগমস্থল (পাবলিক প্লেস)-এ জনপ্রবেশ অধিকার যত সংকুচিত হবে দেশে হাসপাতাল ও কারাগারের সংখ্যা তত বাড়বে। যেখানে ঢাকাসহ দেশের মানুষকে শরীর চর্চা ও বিনোদনের সুযোগ রাখা প্রয়োজন, সেখানে প্রবেশ ফি আরোপ ও বৃদ্ধির মতো বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষসহ দরিদ্র জনগণকে উদ্যানবিমুখ করে তুলবে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫ (গ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হিসাবে নাগরিকের যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার নিশ্চিত করবে।
পবা মনে করে, কিশোর–তরুণদের মধ্যে যদি গাছের গুরুত্ব বোঝানো যায়, প্রকৃতি–জীববৈচিত্র–পরিবেশ, খেলাধুলা ও বিনোদনের প্রতি আগ্রহী করা যায় তাহলে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ইতিবাচক এবং সামাজিক হয়ে উঠবে। তাদের নেশাগ্রস্ত, মোবাইলসহ যন্ত্রের প্রতি আসক্ত ও কিশোর গ্যাংয়ের মতো ধ্বংসাত্মক কাজে যুক্ত হওয়ার ঝুঁকি কমবে।
প্রকৃতি, পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা এবং খেলাধুলার প্রতি শিশু–কিশোরদের আগ্রহী করে তোলা আমাদের সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
পবা মনে করে, বাংলাদেশে পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে জনাব সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো একজন পরিবেশ–সংবেদনশীল মন্ত্রীর সময়কালে এ ধরণের সিদ্ধান্ত হতাশা জনক। আমরা আশা প্রকাশ করি, ইতোমধ্যে মাননীয় মন্ত্রী জনাব সাবের হোসেন চৌধুরী বিষয়টি অবগত হয়েছেন এবং এ সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
পবা বিশ্বাস করে, সরকার জনস্বার্থে অবিলম্বে সকল জনসমাগমস্থল (পাবলিক প্লেস) সব বয়সী মানুষের জন্য উন্মুক্ত রাখবে এবং বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ রাখবে। আগামী প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক সুস্থ্যতার জন্য সকল মাঠ, পার্ক, লেক ও উদ্যানের প্রবেশমূল্য উঠিয়ে বিনা ফিতে প্রবেশের ব্যবস্থা রাষ্ট্রের একটি উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ হতে পারে।
সুপ্তি/ দীপ্ত সংবাদ