বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১৪, ২০২৪
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১৪, ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ভোক্তা আন্দোলন এখন সময়ের দাবি

Avatar photoমৃন্ময় মাসুদ

বৈষম্যবিরোধী ভোক্তা আন্দোলন ভোক্তাদের অধিকার রক্ষার জন্য হবে, যেখানে সব শ্রেণির মানুষকে সমানভাবে পণ্য ও সেবা প্রদানের দাবি জানানো হবে। অযৌক্তিক পণ্যের মূল্য নির্ধারণ, গুণগত মান নিশ্চয়তাসহ ইত্যাদির বিরুদ্ধে সচেতনতা এবং মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা।

সাধারণত কোনো একটি বাজারে বিক্রেতারা নির্দিষ্ট, ক্রেতারাও প্রায় নির্দিষ্ট। কিন্তু বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে বিক্রেতাদের মধ্যে ঐক্য থাকলেও ক্রেতাদের মধ্যে কখনোই ঐক্য গড়ে ওঠে না। বিক্রেতারা পরস্পর যোগসাজশ করে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করে। ক্রেতা কমিটি, সোশ্যাল মিডিয়ায় কমিউনিটি গ্রুপ করে বিক্রেতাদের যোগসাজশ প্রতিহত করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ভোক্তা আন্দোলন পরিচালনার জন্য একটি সুসংগঠিত এবং কার্যকরী প্রক্রিয়া প্রয়োজন। এখানে একটি বিস্তারিত প্রক্রিয়ার রূপরেখা তুলে ধরা হলো:

 

. ক্রেতা কমিটি গঠন

প্রত্যেক এলাকার ক্রেতাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। এ কমিটিতে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যাতে সমাজের সকল স্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।

দায়িত্ব নির্ধারণ: কমিটির সদস্যদের দায়িত্ব ভাগ করে দিতে হবে, যেমন: বাজার মনিটরিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার, আইনি বিষয় দেখাশোনা, এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে সমন্বয় ইত্যাদি।

 

. সোশ্যাল মিডিয়া কমিউনিটি গ্রুপ

ফেসবুক/হোয়াটসঅ্যাপ প্ল্যাটফর্মে গ্রুপ তৈরি করতে হবে, যেখানে ক্রেতারা তাদের সমস্যার কথা শেয়ার করতে পারেন। গ্রুপের জন্য দায়িত্বশীল মডারেটর নিয়োগ দিতে হবে, যারা নিয়মিতভাবে সদস্যদের সমস্যাগুলো শুনবেন এবং তা সমাধানের পথ খুঁজে বের করবেন। একই সাথে, বিভিন্ন পণ্যের দাম, মান, এবং বিক্রেতাদের কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য শেয়ার করা হবে।

 

. বাজার মনিটরিং এবং তথ্য সংগ্রহ

মাসিক বা সাপ্তাহিক বাজার মনিটরিং: নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে বাজার পরিদর্শন করে পণ্যের দাম, গুণগত মান এবং বিক্রেতাদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করা হবে।

জরিপ এবং জনমত সংগ্রহ: বিভিন্ন পণ্যের দাম ও গুণগত মান নিয়ে জরিপ পরিচালনা করে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা হবে, যা পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হবে।

প্রতিবেদন: বাজার পরিদর্শনের ভিত্তিতে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হবে, যা মিডিয়া এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা হবে। বাজারে চলমান সমস্যা এবং ক্রেতাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরার জন্য নিয়মিতভাবে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে এবং মিডিয়ার সাহায্যে তা জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে।

 

. যোগাযোগ এবং সমন্বয়

নিয়মিতভাবে স্থানীয় প্রশাসন এবং ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে ক্রেতাদের দাবি জানানো হবে। ক্রেতাদের সুরক্ষা এবং বৈষম্য কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সচেতন করা হবে।

 

. আইনগত পদক্ষেপ

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের অধীনে যেকোনো ধরনের প্রতারণা বা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সম্ভব হলে কমিটির পক্ষ থেকে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হবে, যিনি ক্রেতাদের আইনি সহযোগিতা করবেন এবং প্রয়োজন হলে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।

 

. সচেতনতামূলক কার্যক্রম

প্রচারণা ক্যাম্পেইন: সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্থানীয়ভাবে এবং অনলাইনে প্রচারণা চালানো হবে। জনগণকে জানানো হবে কীভাবে তারা তাদের অধিকার রক্ষা করতে পারেন এবং কোথায় অভিযোগ জানাতে পারেন।

কর্মশালা: ভোক্তাদের জন্য নিয়মিত কর্মশালা আয়োজন করা হবে, যেখানে তাদের অধিকার, বিক্রেতাদের কৌশল, এবং কিভাবে সঠিক পণ্য নির্বাচন করবেন—এগুলো সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া হবে।

 

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ভোক্তা আন্দোলনকে সুসংগঠিত এবং কার্যকরভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এটি কেবলমাত্র ভোক্তাদের অধিকার রক্ষা করবে না, বরং সমাজে সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার পথকেও প্রসারিত করবে।

একইভাবে বৈষম্যবিরোধী যাত্রী আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ভাড়াটিয়া আন্দোলন এ ধরনের কমিউনিটি বেস আরো আন্দোলন গড়ে উঠলে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বৈষম্য দূর করে সমাজে সাম্যতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।

 

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More