পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিনে সামরিক বাহিনীর একাংশ প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস টালোনকে ক্ষমতাচ্যুত করার ঘোষণা দিলেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। রবিবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে শুরু হওয়া এই অভ্যুত্থানচেষ্টার ফলে রাজধানী কোটোনুসহ কয়েকটি এলাকায় উত্তেজনা ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
সকালে সেনাবাহিনীর একটি দল রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবন দখল করে ‘মিলিটারি কমিটি ফর রিফাউন্ডেশন’ (CMR) নামে নিজেদের পরিচয় দিয়ে ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দেয়। বিদ্রোহী সেনাদের ঘোষণায় সংবিধান স্থগিত, সব সীমান্ত বন্ধ, রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল তিগ্রি পাসকালকে কমিটির প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করার কথা জানানো হয়। ঘোষণার কিছুক্ষণ আগে প্রেসিডেন্ট টালোনের বাসভবনের কাছে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। ফ্রান্স দূতাবাস তাদের নাগরিকদের ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দেয়।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। বেনিনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলাসানে সাইদু ভিডিওবার্তায় জানান যে, “রবিবার ভোরে অল্প সংখ্যক সৈন্য রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে বিদ্রোহ শুরু করেছিল। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনী তাদের শপথে অবিচল থেকে এই অভ্যুত্থানচেষ্টা নস্যাৎ করেছে।” তিনি জানান, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক এবং জনগণকে স্বাভাবিকভাবে দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
সরকারি সূত্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওলুশেগুন আজাদি বাকারি নিশ্চিত করেন, প্রেসিডেন্ট টালোন নিরাপদ আছেন এবং সেনাবাহিনীর বৃহত্তর অংশ সরকারের প্রতি অনুগত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অন্তত ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে।
পশ্চিম আফ্রিকার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল দেশ হিসেবে পরিচিত বেনিনে এ ধরনের ঘটনা নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মালি, বুরকিনা ফাসো, গিনি ও গিনি–বিসাউসহ বেশ কয়েকটি দেশে অভ্যুত্থান বা অভ্যুত্থানচেষ্টা ঘটেছে। বিশ্লেষকদের মতে, বেনিনের ঘটনাও অঞ্চলটিকে ঘিরে বাড়তে থাকা ‘ক্যু বেল্ট’–এর সর্বশেষ উদাহরণ।
ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে আঞ্চলিক জোট ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইকোওয়াস)। সংস্থাটি সংবিধান সম্মত শাসন বজায় রাখতে বেনিন সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস টালোন ২০১৬ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন এবং আগামী এপ্রিল মাসে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হলেও দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।