গত এক দশকে দেশে বেড়েছে পথশিশুর সংখ্যা। কিন্তু বাড়েনি তাদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ। উন্নয়নকর্মীরা বলছেন, বাংলাদেশ শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষর করলেও পথশিশুদের ব্যাপারে রাষ্ট্র বেশ উদাসিন। পথশিশুদের সুরক্ষায় সরকারি সংস্থার সমন্বয় জরুরি বলে মনে করেন তারা।
খুব ছোট থাকতে বাবা মা রেল স্টেশনে ফেলে যায় রিয়াজকে। কুড়িয়ে পেয়ে তাকে লালন পালন করেন এক মহিলা। সেই মহিলাও মারা গেছে কয়েক বছর আগে। তাই এখন প্রতিদিনের খাবার যোগাতে রিয়াজের যুদ্ধ নিয়তির সাথে। একই অবস্থা ১০ বছরের শিশু ইয়াছিনের। বাবা–মায়ের বিচ্ছেদের কারনে জীবনের পথ হারিয়েছে শিশু আগুন, বাদল, আখি ও পারভেজ। পথশিশুরা পথে পথে ঘুরে ফেলে দেওয়া জিনিস সংগ্রহ করে কেজিদরে বিক্রির মাধ্যমে আশায় বুক বাঁধে বড় হওয়ার। ঘুমানোর জন্য অনেকের জোটে না মাথার ওপরে ছাদ। যতটুকু আয়, তা দিয়ে দুমুঠো ভাত জোগাতেই হিমশিম অবস্থা। শিক্ষা নিয়ে ভাবার সময় কই? এমন হাজারো ইয়াছিন, পারভেজরা ঘুরছে পথে পথে।
পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। পারিবারিক ও সামাজিক বাধাসহ বিভিন্ন কারণে পথশিশু হতে বাধ্য হয় তারা। এসব শিশুদের শতকরা ৮২ ভাগই ছেলে। সম্প্রতি ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পথশিশু জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপে দেখা গেছে, পরিবারে জায়গা নেই শতকরা ৩৬ দশমিক ৩ ভাগ শিশুর। পরিবার গ্রহণ করে না ২১ দশমিক ৩ ভাগ শিশুকে। আর পরিবারই নেই ১৫ দশমিক ৯ ভাগ শিশুর। ক্ষুধার তাড়নায় ঘর ছাড়া শিশুর সংখ্যা ৩৭ দশমিক ৮ ভাগ।
পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, সবাই সচেতন না হলে পথশিশুর সংখ্যা কমবে না। উন্নয়ন কর্মীরা বলছেন, পথশিশুদের অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান যোগাতে সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয় ও বিনিয়োগের সঠিক ব্যবহার খুবই জরুরি।
শিশুদের পথে রেখে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নেয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো।
আল/দীপ্ত সংবাদ