শুক্রবার, জানুয়ারি ৩১, ২০২৫
শুক্রবার, জানুয়ারি ৩১, ২০২৫

বিএনপি ও সন্ত্রাসবাদ

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

সুদীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত হয় বাঙালির আত্মপরিচয় ও সম্মান এবং পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় হয় সার্বভৌম বাংলাদেশের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব নেন তখন একদল স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি তার বিরোধিতা করা শুরু করেন। দেশিবিদেশী ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগকে দমিয়ে রাখার অপচেষ্টা করা হয়। পরবর্তীতে অবৈধ ভাবে বাংলাদেশের ক্ষমতা দখলকারীদের শাসন বাংলাদেশে কলংকের ইতিহাস হয়ে থেকে গেছে। এর জলন্ত দৃষ্টান্ত সামরিক ছাউনিতে জন্ম নেয়া জনবিচ্ছিন্ন ও ক্ষমতালিপ্সু দল বিএনপি। বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে খুন, গুমের রাজনীতির প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন করেন সামরিক স্বৈরশাসক জিয়া। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯১৯৬, ২০০১২০০৬ জঙ্গিবাদের উত্থান, ২১ আগস্টে গ্রেণেড হামলা, ১৭ই আগস্ট সারাদেশে সিরিজ বোমাহামলা, সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ এ দেশের আপামর জনগণের ওপর নেমে আসে ভয়ানক বিভীষিকাময় একেকটি সময়।

মার্ক টোয়েন এর একটি উদ্ধৃতি দিয়ে শুরু করছি Truth is stranger than fiction

রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জেনারেল জিয়া প্রবর্তিত সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদকে খালেদাতারেকরা সারাদেশে এমনভাবে প্রতিষ্ঠা করেছিল যা হার মানিয়েছিল কল্পকাহিনীকেও। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে সেই লোমহর্ষক বাস্তবতাকে প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার দায়িত্ব বলে মনে করি।

অতি সম্প্রতি বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে কানাডা আদালত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ। কানাডার আদালতে এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করা হলো। মোহাম্মদ জিপসেদ ইবনে হক নামে এক বিএনপিকর্মী দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলে তা নাকচ করে দেন দেশটির ফেডারেল কোর্ট। রায়ে উল্লেখ করা হয়, ওই ব্যক্তি এমন দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যেই সংগঠন বল প্রয়োগ এবং সন্ত্রাসের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছিল। সবশেষ ১৫ জুন একটি জুডিশিয়াল রিভিউর আবেদন নিষ্পত্তিকালে আদালতের বিচারক বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দেন। এর আগে ২০১৮ সালে মাসুদ রানা ও ২০২২ সালে সেলিম নামে বিএনপির অপর দুই কর্মীর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা নাকচ করে দেয় কানাডার ফেডারেল কোর্ট। তারও আগে ২০১৭ সালে প্রথম দফায় মোহাম্মদ জুয়েল হোসেন ও ২০১৮ সালে বিএনপি কর্মী মোস্তফা কামাল নামে ব্যক্তি আশ্রয় চাইলে দ্বিতীয় দফায় বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

বিএনপিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সন্ত্রাসবাদের জনক বললে অত্যুক্তি হবে না। একটু পেছনে ফেরা যাক, বিএনপির সন্ত্রাসবাদের শুরু স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়ার হাত ধরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে। সন্ত্রাসের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে জেনারেল জিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন অস্ত্র। ১৯৭৭ সালে মাত্র দুই মাসের মধ্যে ১ হাজার ১৪৩ জনকে হত্যা করেছিল জেনারেল জিয়া। এছাড়া কয়েকশ’ সেনা সদস্যকে ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল। জেনারেল জিয়ার হাত ধরেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুর্নবাসিত হয় রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীরা।

বিএনপির সন্ত্রাসী বর্বরতা অনন্য নজির সৃষ্টি করে ২০০১ সালে। ছাপিয়ে যায় ১৯৯১৯৬ সালের শাসনামলকেও। বিএনপি সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষতায় ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন নামে প্রায় অর্ধশতাধিক জঙ্গি সংগঠনের বিস্তার ঘটে বাংলাদেশে। জেএমবি জঙ্গি এবং বাংলা ভাইদের মতো ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের পুলিশ গ্রেফতার করলেও, বিএনপির মন্ত্রীএমপিদের সরাসরি সুপারিশে তারা বারবার ছাড়া পেয়ে যায়। দেশ হয়ে উঠেছিল সন্ত্রাস, লুটতরাজকারী ও ধর্ষকের অভয়ারণ্য।

বিএনপির সন্ত্রাসের বর্বরতা এতটায় মারাত্মক ছিল সরকার গঠনের প্রথম ১০ দিনেই কেবল সাতক্ষীরা জেলা শহরে বিএনপিজামায়াতের সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছে ৮ জন মানুষ (সূত্র: জনকন্ঠ ১৮ নভেম্বর ২০০১)। ১ নভেম্বর সাতক্ষীরা সদরে বিনারপোতা গ্রামের একজনের বাড়িতে ঢুকে স্বামীকে বেঁধে রেখে ২ সন্তানের জননীকে, কালীগঞ্জের রঘুনাথপুর গ্রামে এক বিধবার ৬ষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া কন্যাকে মায়ের সামনে ও আশাশুনির রাজপুর গ্রামে ৬ বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয় বিএনপি জামাতের সন্ত্রাসীদের দ্বারা। পূর্ণিমা রানী ২০০১ এর জাতীয় নির্বাচনে কাজ করেছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট হিসেবে। বিএনপি কর্মীরা তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে। বাগেরহাটের ছবি রানী বিশ্বাসকে নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে বাসট্যান্ড পুলিশের সামনে থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিএনপি অফিসে ধর্ষণ করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। ২০০১২০০২ এই দুই বছরে বিএনপির সন্ত্রাসীদের দ্বারা ধষর্নের শিকার হয়েছিলেন মোট ১৫৫৭ জন নারী। হত্যা করা হয় হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে।

২০০১ সালের নির্বাচনের পরে সারাদেশে সর্বমোট ১৮ হাজারের বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এ সব হামলায় বিএনপির ৮ জন মন্ত্রী এমপি ও সাংসদের জড়িত থাকার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসে। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় ৩০০ হিন্দু পরিবার হামলা নির্যাতনের শিকার হয়। বরিশালের বানারিপাড়া ও উজিরপুর এবং পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি থেকে কয়েকশ’ হিন্দু পরিবার বসত বাড়ি ছেড়ে গোপালগঞ্জের রামশীলে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেয়। তবে নিজ নির্বাচনী এলাকার মানুষের এমন দুর্দশার পরও উদ্বেগহীন ছিলেন বিএনপির তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী। তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘কোনো নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি।’

২০০১০৬ সালে শাসনামলে বিএনপির সীমাহীন দুর্নীতি, সন্ত্রাস রাহাজানিকে জনগণ প্রত্যাখান করে ২০০৮ নির্বাচনে। ২০০৮ সালে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দেশের অভ্যন্তরে ট্রাইবুন্যাল গঠন অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনে সরকার । মানবতাবিরোধী বিচার বন্ধে বিএনপির সমর্থন নিয়ে জামায়াতশিবির দেশব্যাপী তান্ডব চালায়। সারাদেশে ওই সময় সহিংসতার ৪১৯টি ঘটনা ঘটে। দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা, অগ্নিসংযোগ চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ কেড়ে নেওয়া হয় ৫০টি তাজা প্রাণ।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বিরোধিতা করে বিএনপিজামায়াত জোট দেশব্যাপী ভয়ংকর অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সে সময় বিএনপিজামায়াতের কর্মীরা শত শত যানবাহন ভাংচুরের পাশাপাশি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। ওই ঘটনায় পেট্রোল বোমা, হাতে বানানো বোমা এবং অন্যান্য সহিংসতায় কয়েকশ’ মানুষ প্রাণ হারান। সহিংসতার সময় রাস্তার পাশে থাকা হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলে জামায়াতশিবির কর্মীরা। এছাড়া দোকানপাট, সরকারিবেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতেও আগুন দেয়া হয়। সারা দেশে ৫৮২টি স্কুলের ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি নির্বাচনের এক বছর পূর্তির দিন আবারও জ্বালাওপোড়াও শুরু করে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বিএনপিজামায়াত জোট, বেঘোরে প্রাণ দিতে হয় শতাধিক নিরীহনিরপরাধ মানুষকে। এদের বেশিরভাগই পেট্রোল বোমা এবং আগুনে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। ওই ঘটনায় আহত হন সহস্রাধিক। গণমাধ্যমের তথ্যমতে, সে সময় ২ হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেলগাড়ি এবং ৮টি যাত্রীবাহী জাহাজে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় সরকারি নানা দফতর। পেট্রোলবোমায় ২৩১ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান এবং ১ হাজার ১৮০ জন আহত হন। পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাঙচুর এবং ৬টি ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়।

অতীতের মতই বিএনপিজামায়াত দেশে আবারও আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছে। সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে হামলা হয়েছে। ১৭, ১৮টি মোটরসাইকেল পুড়িয়েছে। যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর হামলা চালিয়েছে। যার স্বরূপ দেশ ও জাতির সামনে পুনরায় উন্মোচিত হয়েছে সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষক, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের জনক বিএনপির হাতে আমরা দেশটাকে ছেড়ে দিতে পারি না।

লেখক

আহমেদ কৌশিক

সাবেক সদস্য, তথ্য ও গবেষণা উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

 

 

এসএ/দীপ্ত নিউজ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More