রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, বিএনপি‘র জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার মুখ নাই। তারা আন্দোলন সংগ্রামের নামে দেশের মানুষের গাড়ি পু্ড়িয়ে দিচ্ছে। দোকানপাট ভেঙে দিচ্ছে। মানুষ মেরে ফেলছে। মানুষের এতো ক্ষতি করে কোন মুখে তারা জনগণের কাছে ভোট চাইবে। তাই তারা ভোটে না এসে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করছে।
শনিবার (৪ নভেম্বর) দুপুর ১২ টার দিকে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি রেলস্টেশনের আইকনিক ভবনে উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি কথাগুলো বলেন।
তিনি আরও বলেন, আপনারা দেখেছেন বিএনপি জামাতের লোকজন কিভাবে পুলিশকে পিটিয়ে মেরেছে। পুলিশ দেশের জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে। তারা কি অন্য দেশ হতে এসেছে। তারা আমাদের কারো না কারো ভাই, কারো সন্তান। আন্দোলন আমরাও করেছি। আমরাতো কখনো পুলিশকে মারি নাই।
মন্ত্রী সুজন বলেন, বিএনপি–জামাত ভোট না করে শুধু অভিযোগ করছে। তারা ভোটে এসে দেখুন কারচুপি হচ্ছে কিনা। তারপর অভিযোগ করুক। ২০০৮ সালে নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ৩০ টা আসন পেয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে সারাদের ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে নির্বাচনে অংশ নিলো না। আবার ২০১৮ সালের নির্বাচনের সকাল ১১ টায় মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বললো শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ চলছে। আবার তিন দিন পর বলছে আগের দিন রাতেই নাকি ভোট গ্রহণ হয়েছে। তারা সমসময় মিথ্যা বলতে ভালোবাসে।
প্রধান অতিথি সুজন বলেন, এখন সব জায়গায় উন্নয়ন হয়েছে। এখন চিলাহাটি স্টেশনেই ইমিগ্রেশন করে ভারতের শিলিগুড়ি যেতে পারবে উত্তরবঙ্গের মানুষ। বিএনপি–জামাত রেলকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেলের অভাবনীয় উন্নয়ন করেছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তিনি নৌকায় পুনরায় ভোট চান।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে ডোমার–ডিমলা আসনের সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার, রেলের মহাব্যবস্থাপক অসিম কুমার তালুকদার, নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ, পুলিশ সুপার গোলাম সবুর, পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক, প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহিম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চিলাহাটিতে আধুনিক রেলওয়ে ষ্টেশনের নির্মাণ কাজ করা হয়েছে। ২০১৯ সালের জুনে শুরু হয় পুরো ষ্টেশনের আধুনিকায়নের কাজ। পরে করোনা মহামারি ও নকশা জটিলতার কারনে দুই বছর বন্ধ থাকে নির্মাণ কাজ। নকশা সংশোধণ করে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক ষ্টেশনের আদলে চিলাহাটি রেলওয়ে ষ্টেশনের আইকনিক ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। আধুনিক যাত্রী সুবিধার জন্য টিকিট কাউন্টার, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর বিশ্রামাগার তো থাকবে। থাকছে রেলওয়ের কার্যক্রম চালানোর জন্য বিভিন্ন বিভাগের অফিস। ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় থাকছে ব্যাংক ও রেস্তোরা । তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইমিগ্রেশন পয়েন্ট। চিলাহাটি হয়ে ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাত্রীরা চলাচল করতে পারবে এই ষ্টেশন থেকেই। এতদিন মিতালী এক্সপ্রেসে যাতায়তের জন্য ঢাকা থেকে ইমিগ্রেশন হলেও সেই সুবিধা চিলাহাটি থেকেই পাবেন উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা। ফলে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারবেন ভারতের শিলিগুড়িতে।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৫ সালে ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধের পর বাংলাদেশের চিলাহাটি আর ভারতের হলদিবাড়ী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ৫৫ বছর পর ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ২০২১ সালের ২৭ মার্চ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য মিতালী এক্সপ্রেস উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে করোনাভাইরাস ও ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে যায় মিতালী এক্সপ্রেসের চলাচল। উদ্বোধনের প্রায় দুই বছর পর ২০২২ সালের জুনে চালু হয় যাত্রীবাহী ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেস।
ইয়াছিন সিথুন/ আল / দীপ্ত সংবাদ