রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪

বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য অন্যতম প্রধান বাধা ঘুষ-দুর্নীতি

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন

Avatar photoমৃন্ময় মাসুদ

বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্য এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে ঘুষদুর্নীতিকে অন্যতম প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া সরকারি কেনাকাটা, মেধাসম্পদ সংরক্ষণ, ডিজিটাল বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও পূর্ণ শ্রমিক অধিকার না থাকার মতো বিষয়গোলোও তুলে ধরা হয়েছে।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর (ইউএসটিআর) প্রকাশিত ২০২৪ সালের বৈদেশিক বাণিজ্যে বাধাবিষয়ক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের এ বাধাগুলো চিহ্নিত করা হয়।

ফরেন ট্রেড ব্যারিয়ারস’ শীর্ষক মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বিশ্বের ৬০টি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। মোট ৩৯৪ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনটি শুক্রবার ওয়াশিংটনে প্রকাশ করেন দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী ক্যাথরিন টাই।

মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে সাম্প্রতিক উদ্যোগের প্রশংসা করে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইন সংস্কারের মাধ্যমে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে এসব উদ্যোগের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ, বাংলাদেশে নকল ও চোরাচালানের পণ্য সহজেই পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের আহ্বান করা দরপত্রে অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা যাতে বিজয়ী হত না পারে এজন্য বিদেশি প্রতিযোগীরা প্রায়ই তাদের স্থানীয় অংশীদারদের ব্যবহার করে ক্রয়প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক প্রতিষ্ঠান এই ইস্যূতে অভিযোগ করে বলেছে যে ঘুষ, প্রতিযোগিতাবিরোধী চর্চা, দরপত্রের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব এসব বিষয় সরকারি দরপত্রে মার্কিন ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণের পথে বাধা হিসেবে কাজ করছে। সরকারি কেনাকাটা সাধারণত পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট২০০৬–এর আওতায় দরপত্রের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশ প্রকাশ্যে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের নীতি অনুসরণ করলেও দুর্নীতির অভিযোগ সাধারণভাবেই রয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়ভাবে ইলেকট্রনিক সরকারি ক্রয় পোর্টাল চালু করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অংশীজনেরা পুরোনো প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগের পাশাপাশি পছন্দের দরদাতার স্বার্থে পক্ষপাতমূলক শর্ত জুড়ে দেয়া ও দরপত্রের সামগ্রিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

ডিজিটাল বাণিজ্য নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপাত্ত সুরক্ষা আইন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইন হচ্ছে বাংলাদেশে ডিজিটাল বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতার মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ থেকে অর্জিত লভ্যাংশ বিদেশে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা আছে। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে রয়েছে আইনি জটিলতা।

শ্রমিক অধিকারের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রমিক অধিকার, বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মীদের অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৩ সালে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা জিএসপি স্থগিত করেছিল। এটি এখনো বহাল আছে।

ঘুষদুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ব্যবসাবাণিজ্য বিকাশে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ঘুষ ও দুর্নীতি। ব্যবসায়িক বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে ঘুষ ও চাঁদা দেওয়ার প্রচুর অভিযোগ থাকলেও দুর্নীতিবিরোধী আইনের প্রয়োগ যথেষ্ট নয়। মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো অভিযোগ করেছে যে তাদেরকে বাংলাদেশে ব্যবসা করতে হলে লাইসেন্স পাওয়ার জন্যও ঘুষ দিতে বাধ্য হতে হয়। এছাড়া বাংলাদেশে দুর্নীতি একটি ব্যাপক ও দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। লেনদেন ও উপহার অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও বাণিজ্যিক লেনদেনে ঘুষ ও চাঁদাবাজি সাধারণ বিষয়। মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগ হচ্ছে, বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তারা ঘুষ চাওয়ায় লাইসেন্স ও দরপত্রের অনুমোদন পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। প্রতিবেদনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে উল্লেখ করে বলা হয়, গত ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রণীত সরকারি চাকরি আইন বিল হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, যে কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করার আগে দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। একই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে দুদকের ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছে। এরপরও দুদক ক্রমবর্ধমানভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করছে। তবে সেখানে বহু মামলাই অমীমাংসিত থেকে যাচ্ছে।

 

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More