বাণিজ্য, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে চায় আলজেরিয়া। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ঢাকায় দেশটির দূতাবাসের এক অনুষ্ঠান একথা জানান রাষ্ট্রদূত আব্দেলওয়াহাব সাইদানি।
আলজেরিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ১৯৬০ সালের গণবিক্ষোভ দিবস উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকাস্থ আলজেরিয়া দূতাবাস।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আলজেরিয়ার জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ১৯৬০ সালের বিক্ষোভে প্রাণ হারানো শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন উপস্থিত অতিথিরা। এরপর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা হয়।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত আব্দেলওয়াহাব সাইদানি তার ভাষণে ১১ ডিসেম্বর ১৯৬০–এর বিক্ষোভের ঐতিহাসিক তাৎপর্য তুলে ধরেন। তিনি স্মরণ করেন কীভাবে সাহসী আলজেরিয়ানরা ফরাসি উপনিবেশবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, যখন ফরাসি প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্য গোল আলজেরিয়াতে তার “তৃতীয় উপায়” পরিকল্পনা প্রচারের জন্য আসেন, যা আংশিক সার্বভৌমত্ব প্রদান করলেও প্রকৃত স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল।
রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে যে কঠোর দমন–পীড়ন চলেছিল, তা তাদের স্বাধীনতার প্রতি অটল সংকল্পকে আরও দৃঢ় করেছে। ফরাসি বাহিনীর সহিংস প্রতিক্রিয়া, যার মধ্যে ব্যাপক গ্রেফতার ও হত্যাকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত ছিল, তা আলজেরিয়ান জনগণকে একত্রিত করতে সহায়ক ছিল এবং আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। এই সম্মিলিত প্রতিরোধ আলজেরিয়া স্বাধীনতা অর্জনে সহায়ক হয়।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ১১ ডিসেম্বর ১৯৬০–এর ঘটনাগুলি শুধুমাত্র আলজেরিয়ান ঐক্যকে শক্তিশালী করেনি, বরং জাতিসংঘের কাছে আলজেরিয়ার আত্মনির্ভরতার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, যা শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সকে আলোচনা করতে বাধ্য করেছিল এবং উপনিবেশবাদী শাসন সমাপ্ত হয়। আজ আলজেরিয়া একটি সার্বভৌম জাতি হিসেবে উদ্ভাবন, ঐক্য এবং বৈচিত্র্যময় অর্থনীতির মাধ্যমে অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধি অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রাষ্ট্রদূত সাঈদানি আলজেরিয়ার বিভিন্ন খাতে, বিশেষ করে যুব শক্তির ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতির প্রশংসা করেন, এবং সেই সাথে দেশের স্বাধীনতার জন্য যে শহীদরা আত্মদান করেছেন তাদের সম্মান জানান।
বাংলাদেশের সঙ্গে আলজেরিয়ার সম্পর্কের মিল তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত বলেন, যে সম্মান এবং আত্মনির্ভরতায় ভিত্তি করে দুই দেশের মধ্যে যে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি দুই দেশের মধ্যে স্থায়ী বন্ধুত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে, ১৯৬০ সালের ১১ ডিসেম্বর বিক্ষোভ নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এতে আলজেরিয়ার স্বাধীনতার জন্য আত্মদানকারী বীরদের স্মরণ করা হয়।
আলজেরিয়া দূতাবাস জানায়, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়িয়ে বাংলাদেশ ও আলজেরিয়া বন্ধুত্ব আরও গভীর করতে তাদের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।