দেশের পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যায় ১১ জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫২ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৩৯ জন পুরুষ, ৬ জন নারী ও ৭ শিশু রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, এই ৫২ জনের মধ্যে কুমিল্লায় ১৪, ফেনীতে ১৭, চট্টগ্রামে ৬, খাগড়াছড়িতে ১, নোয়াখালীতে ৮, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১, লক্ষ্মীপুরে ১, কক্সবাজারে ৩ ও মৌলভীবাজারে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে মৌলভীবাজারে যে দুই ব্যক্তি নিখোঁজ ছিলেন, তাদের মধ্যে একজনের লাশ পাওয়া গেছে; আরও একজন নিখোঁজ রয়েছে।
অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা জানান, আক্রান্ত ১১ জেলার ৬৮ উপজেলার প্লাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন/পৌরসভা ৮৯২টি। পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় প্রদানের জন্য মোট ৩ হাজার ৪০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। অশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় মোট ৫ লাখ ২ হাজার ৫০১ ব্যক্তি ও ৩৬ হাজার ৪৪৮ গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
আলী রেজা জানান, ১১ জেলায় মোট ১০ লাখ ৭২ হাজার ৫৭৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৪ লাখ ৮০ হাজার ৪৬৩ জন। ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য মোট ৫৯৫টি মেডিকেল টিম সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। বন্যাকবলিত এলাকায় সরকারি–বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে।
তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক কর্তৃক সংগৃহীত মোট ১ লাখ ৪ হাজার ১০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, কাপড় ও পানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের (ডিডিএম) মাধ্যমে বন্যাকবলিত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। ডিডিএম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
বন্যা আক্রান্ত জেলাসমূহের প্রশাসকদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে একসাথে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান অতিরিক্ত সচিব।
বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোতে মোবাইল ও টেলিফোন যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বন্যা আক্রান্ত জেলাসমূহে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করার জন্য ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনী ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসকবৃন্দ সেবা প্রদান করছেন। পাশাপাশি স্থানীয় ক্লিনিক, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
এ ছাড়া বন্যা পরবর্তী পানি বাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব রোধ করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে বলেও জানান আলী রেজা।