বিজ্ঞাপন
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫

বগুড়ায় ৪৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

গাবতলীর উপজেলার ইছামতী নদীর পাড়ে শুরু হয়েছে ৪৫০ বছরের বেশি পুরনো ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৬টার থেকে শুরু মেলাটি সন্যাস মেলা ও মাছের মেলা নামে পরিচিত।

তবে হাল আমলে এসে মেলাটি জামাই মেলা নামে বেশি পরিচিত। যে কারণে রীতি অনুযায়ী শ্বশুরবাড়িতে সবচেয়ে বড় মাছ কিনে নিয়ে যেতে চলছে জামাইদের নীরব প্রতিযোগিতা। এ বছর মেলায় ৫ কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হবে বলছেন আয়োজক কমিটি।

কথিত আছে, ৪৫০ বছরের বেশি সময় আগে মেলা সংগঠনের স্থানে একটি বিশাল বটবৃক্ষ ছিল। একদিন সেখানে এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব হয়। পরে দলে দলে সন্ন্যাসীরা এসে একটি আশ্রম তৈরি করেন। একপর্যায়ে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে সেটি পুর্ণ্যস্থানে পরিণত হয়। পরবর্তীতে, প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার ওই স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এতে সমাগত হন দূরদূরান্তের ভক্তরা। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে পূজার দিনটি একটি গ্রাম্য মেলার গোড়াপত্তন হয়। এক সময় সন্ন্যাসীরা স্থানটি ত্যাগ করে চলে গেলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সন্ন্যাসী পূজা বন্ধ করে দেননি। এভাবেই বাড়তে থাকে মেলার পরিচিতি। মেলার মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকত দুই থেকে আড়াই মণ ওজনের বাঘাইর মাছ। তবে, বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট বাঘাইড় মাছকে মহাবিপন্ন ঘোষণা করায় গত তিন বছর ধরে মাছটি মেলায় চোখে না পড়লেও এবার অন্তত পাঁচটি দোকানে মাছটি দেখা গেছে। এছাড়া পুকুরনদীবিলের তাজা রুই, কাতলা, ব্রিগহেড, ব্লাককার্প, গুজিয়া, বোয়াল, আইড়, পাঙ্গাশ ছাড়াও আছে বিভিন্ন সামুদ্রিক হিমায়িত মাছ। দাম নিয়ে ক্রেতা বিক্রেতার ভিন্নমত থাকলেও বেচাকেনা চলছে জমজমাট। পোড়াদহ মেলার মূল আকর্ষণ বড় সাইজের মাছের পরেই বড় এবং বিভিন্ন আকৃতির মিষ্টির। এছাড়া রয়েছে নাগরদোলা, সার্কাসসহ ছোট বাচ্চাদের বিভিন্ন রাইড। মেলায় বাঘাইড় মাছ নিয়ে আসা বিক্রেতা জমির উদ্দিন জানান, মেলায় তিনি প্রতিবছরই মাছ বিক্রি করতে আসেন। এখানে বড় আকারের মাছ বেশি বিক্রি হয়। ক্রেতারা দামাদামি করলেও তারা বড় আকারের মাছ কিনতেই বেশি পছন্দ করেন। তাই তারা বিভিন্ন জাতের বড় মাছ এ মেলায় উঠিয়েছেন। এরমধ্যে বাঘাইড় মাছটি এ মেলার সবচেয়ে বড় মাছ।

তিনি জানান, ১৬০০ টাকা কেজি হিসেবে মাছটির দাম হাঁকিয়েছেন ৬৪ হাজার টাকা। সকাল বেলা ৯টা পর্যন্ত বেশ কয়েকজন ক্রেতা মাছটি কিনতে দাম হাঁকিয়েছেন।

এরমধ্যে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৩৩ হাজার টাকা দাম বলেছেন।

মাছ বিক্রেতা হাবিবুর রহমান, আব্দুল মমিনসহ একাধিক মাছ বিক্রেতা জানান, ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় রুই, কাতলা, মৃগেল, চিতল, বোয়াল, হাঙড়ি, গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, বিগহেড, কালিবাউশ, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাঝারি ও বড় আকারের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এসব মাছ ওজনে ৫ থেকে ২৫ কেজি পর্যন্ত।

তারা জানান, প্রতিকেজি রুই বিক্রি হচ্ছে আকার ভেদে ৩০০৮০০ টাকা, কাতলা ৩৫০৮০০, মৃগেল ২৫০৪০০, চিতল ৩০০৬০০, বোয়াল ৬০০১২০০, হাঙড়ি ২০০৪০০, গ্রাসকার্প ২৫০৫৫০, সিলভার কার্প ৩০০৫০০, বিগহেড ২৫০৫০০, কালিবাউশ ২৫০৪০০, পাঙ্গাস ১৫০৬০০ টাকা।

মেলায় মাছ কিনতে আসা শাহাদাত হোসেন ও সায়েম রহমান জানান, প্রতিবছর আমরা এ মেলায় মাছ কিনতে আসি। এবারও এসেছি। এদের মধ্যে শাহাদাত হোসেন ১২ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ কিনেছেন। পোড়াদহ মেলা বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। মেলায় বিগত বছরে বড় বড় মাছ উঠতো। এবারের মেলায় তুলনায় বড় মাছ উঠেনি। তারা মেলায় ঘুরে সামর্থ্য অনুযায়ী মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরবেন।

গাবতলী সদরের আনিছুর রহমান জানান, ১১ কেজি ওজনের একটি বিগহেড মাছ কিনেছেন। পরিবার নিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি এসছেন তিনি। মেলায় এসে মাছের দাম করছেন। কয়েকটা মাছের দোকান ঘুরেই পছন্দমত একটা বিগহেড মাছ কিনেছেন।

বিভিন্ন দোকান ঘুরে কোনোটা দামে আবার কোনোটা মনে মিলছিল না তার। বাড়িতে সবাই অপেক্ষা করছে। এখন কিছু মিষ্টি নিয়ে ফিরবেন বলেও জানান তিনি। স্থানীয় ও মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের মধ্যে অনেক মাছচাষী কেবল মেলায় অধিক লাভে বড় মাছ বিক্রয়ের জন্য মাছ বড় করেন। মেলায় বিক্রয়ের জন্য বেশ আগে থেকেই নদী থেকে আইড়, বোয়াল ইত্যাদি মাছ ধরে পুকুরে বা জলাশয়ে বেঁধে রাখা হয়। মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামগঞ্জের সবাই তাদের মেয়ে, জামাইসহ আত্বীয়স্বজনদের নিমন্ত্রণ করেন।

অতিথিদের বড় আকৃতির মাছ, মিষ্টি দ্বারা আপ্যায়ন করেন। এ মেলার আমেজ চলে সপ্তাহব্যাপী। গাবতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশিক ইকবাল বলেন, মেলাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের একটি টিম কাজ করছে। এছাড়া যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে।

মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং মেলা কমিটির সভাপতি আব্দুল মজিদ মন্ডল বলেন, মেলাটি মূলত মাছের। মেলায় প্রায় ৫০০টি মাছের দোকান রয়েছে। এই দোকানগুলোতে একদিনে ৫ কোটি টাকার মতো লেনদেন হবে। মেলার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে জেলা পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। মেলাটি চলবে আজ গভীর রাত পর্যন্ত।

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More