বাংলাদেশ নারী শ্রমিককেন্দ্রের (বিএনএসকে) নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলামকে মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের জন্য ‘ফ্রাঙ্কো–জার্মান পুরষ্কার ২০২৫’ –এ ভূষিত করা হয়েছে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্স ও জার্মানির রাষ্ট্রদূত জঁ–মার্ক সেরে–শারলে এবং ড. রুডিগার লোটজ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ঢাকায় ফ্রাঙ্কো–জার্মান দূতাবাসে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে সুমাইয়া ইসলামকে এই পুরস্কার প্রদান করেন।
২০১৬ সাল থেকে ফ্রান্স ও জার্মানি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষায় অসাধারণ অবদান রাখা ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে যৌথভাবে এই সম্মাননা প্রদান করে আসছে। বিশেষত অভিবাসী নারী শ্রমিক, যৌনকর্মী, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং অন্যান্য সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার এগিয়ে নেওয়ার দীর্ঘদিনের নিষ্ঠা ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সুমাইয়া ইসলাম এ বছর পুরস্কারটি অর্জন করেছেন।
একজন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নাগরিক সমাজের নেতৃত্বদানকারী হিসেবে সুমাইয়া ইসলাম গত দুই দশক ধরে বিএনএসকে ও বমসা (BOMSA) সহ তৃণমূল পর্যায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেছেন, যেগুলো অভিবাসী নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে। এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এখন বহু আঞ্চলিক নাগরিক সমাজ নেটওয়ার্কে অবদান রাখছেন। তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মহিলা বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার অ্যাডভোকেসি এবং নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ বাংলাদেশি নারী অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার ও সুরক্ষা জোরদার করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আইনগত সংস্কার এগিয়ে নিতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। তিনি নিরলসভাবে সেইসব নারীর কণ্ঠস্বর তুলে ধরেন, যারা প্রায়শই উপেক্ষিত থাকে। তার অধ্যবসায় ও প্রতিশ্রুতি বহু প্রান্তিক নারীর কাছে অনুপ্রেরণাদায়ক।
পুরস্কার গ্রহণের সময় সুমাইয়া ইসলাম বলেন, এটি আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়, এবং এই ফ্রাঙ্কো–জার্মান মানবাধিকার পুরস্কার পেয়ে আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ ও গভীরভাবে আনন্দিত। জার্মানির রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লোটজ বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে এ বছরের ফ্রাঙ্কো–জার্মান মানবাধিকার ও আইনের শাসন পুরস্কার এমন এক বাংলাদেশি কর্মীকে সম্মান জানাচ্ছে, যার কাজ এই দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ে বিদ্যমান সাহস ও অঙ্গীকারের প্রতিফলন। তৃণমূল মানবাধিকার রক্ষকরা অধিকার সুরক্ষা, জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং যারা প্রায়শই উপেক্ষিত থাকে তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেন। লিঙ্গসমতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এবং আরও ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠায় তাদের প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগে, এই পুরস্কারটি ২০১৭ সালে অধিকার–এর প্রতিষ্ঠাতা আদিলুর রহমান খানকে প্রদান করা হয়েছিল। তিনি ছিলেন দ্বিতীয় বাংলাদেশি প্রাপক; তার আগে ২০১৬ সালে আর্টিকেল ১৯–এর তাহমিনা রহমান এই পুরস্কার পান।
রুবায়েত হাসান