স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার বছর না পেরোতেই ফের পানিতে ডুবেছে ফেনীর জনপদ। বৃষ্টি বন্ধ ও রোদ উঠায় ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। বন্যা কবলিত নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।
জেলার ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার কিছু অংশে লোকালয়ে এখনো পানি থাকলেও অন্য দুই উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। দুর্গত এলাকায় পানি নামার সঙ্গে ফুটে উঠেছে ক্ষতচিহ্ন। কিছু কিছু এলাকায় হাঁটুসমান পানি আবার কোথাও কোমরসমান পানি রয়েছে। অনেক এলাকায় খাদ্য ও নিরাপদ পানির সংকটে বানভাসি মানুষের ভোগান্তি এখনো কমেনি।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বাঁধ ভাঙনে গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) থেকে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এ দুই উপজেলায় পানি কমে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার আংশিক এলাকা। প্লাবিত ১১২টি গ্রামের লাখো মানুষ পড়েন চরম ভোগান্তিতে।
এছাড়া ৮৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষ আশ্রয় নেন। তাদের মধ্যে ইতোমধ্যে ৫ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছে। দুর্গত এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ২৩০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন।
কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, এবারের বন্যায় ১ হাজারেরও বেশি মৎস্য ঘের ও পুকুর এবং ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়াও বন্যায় এখন পর্যন্ত পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় প্রাণিসম্পদে ৬৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭৫০ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুরোপুরি পানি নেমে যাওয়ার পরই ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত পরিমাণ তুলে ধরা হবে বলে জানান তারা।
ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা আলী আশরাফ বলেন, নদীর পাড়ে থাকি বলে প্রতি বছরই এ দুঃখ সইতে হয়। বার বার সব তছনছ হয়ে গেলে আমরা কিভাবে বাঁচব।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন মজুমদার বলেন, নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর এলাকায় পানি বাড়ছে। পানি নামার পর বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হবে।
ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসমাইল হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় কাজ করছে জেলা প্রশাসন। পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা চলছে। সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি তদারকি করা হচ্ছে।
এরআগে, ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি অংশে ভাঙনের দেখা দেয়।
আল/মামুন