ইসলামে ফিতরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মূলত পবিত্র রমজান মাসের শেষে ঈদুল ফিতরের পূর্বে গরিব–দুঃস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়। অনেকেই ফিতরা পরিশোধের সঠিক সময় ও বিধান সম্পর্কে বিভ্রান্তির মধ্যে থাকেন। কোরআন–হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী ফিতরা কবে, কীভাবে এবং কেন দিতে হয়, তা জানা জরুরি।
ফিতরার সংজ্ঞা ও গুরুত্ব
ফিতরা (সাদকাতুল ফিতর) মূলত ঈদের দিন গরিব–মিসকিনদের সহায়তার জন্য নির্ধারিত একটি দান, যা রোজার পবিত্রতা রক্ষা এবং ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ইসলামে নির্ধারিত হয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন:
“রাসুলুল্লাহ (সা.) ফিতরার সদকা নির্ধারণ করেছেন, যেন এটি রোযাদারের জন্য পবিত্রতা লাভের মাধ্যম হয় এবং মিসকিনদের খাদ্যের সংস্থান হয়।” (আবু দাউদ, হাদিস: ১৬০৯)
ফিতরা পরিশোধের সময়
ফিতরা আদায়ের সর্বোত্তম সময় হলো ঈদুল ফিতরের সালাতের পূর্বে। তবে এটি রমজানের শেষ দিকে আদায় করা সুন্নাত।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “ঈদের সালাতের পূর্বে যে ব্যক্তি ফিতরা আদায় করবে, তা গ্রহণযোগ্য জাকাত হিসেবে গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি সালাতের পর আদায় করবে, তা সাধারণ দানের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (আবু দাউদ, হাদিস: ১৬০৫)
কিছু ইসলামী ফকিহদের মতে, রমজানের প্রথম দিকেই ফিতরা আদায় করা যায়, তবে সর্বোত্তম সময় ঈদের নামাজের আগ পর্যন্ত।
ফিতরার পরিমাণ
হাদিসে নির্ধারিত পরিমাণ অনুযায়ী ফিতরা সাধারণত এক সা‘ (প্রায় ৩.৫ কেজি) খাদ্যশস্য বা এর সমপরিমাণ অর্থ দিয়ে আদায় করা হয়। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “নবী (সা.) মুসলমানদের ওপর ফিতরা নির্ধারণ করেছেন এক সা’ খেজুর বা এক সা’ যব।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৫০৩)
ফিতরা যাদের দিতে হবে, তাদের মধ্যে রয়েছে দরিদ্র, অভাবী, ঋণগ্রস্ত, মিসকিন এবং পথচারী।
ফিতরার তাৎপর্য ও সামাজিক প্রভাব
ফিতরা পরিশোধের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র শ্রেণির মানুষ ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। এটি সমাজের মধ্যে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের বোধ সৃষ্টি করে।
ফিতরা পরিশোধ করা শুধু একটি ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, বরং এটি সামাজিক দায়িত্বও। কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী ঈদের নামাজের আগে ফিতরা প্রদান করা সর্বোত্তম। তাই রমজানের শেষ দিকে আমরা যেন আমাদের ফিতরা পরিশোধ করে সমাজের দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াতে পারি।