জাতীয় নির্বাচনে মানিকগঞ্জ –২ আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ও হরিরামপুরের বালু মহাল নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ায় প্রাণভয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান।
শুক্রবার (২৩ জুন) বিকেলের দিকে হরিরামপুর উপজেলা চত্তরে উন্মুক্ত সংবাদ সম্মেলনে নিজ দলের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনেন হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান।
তার অভিযোগ, এমপি মমতাজ ও তার অনুসারীরা নানা হামলা মামলা করে তার দলের লোকজনের ক্ষতি করছেন। যেকোন সময় তার বড় ধরনের ক্ষতির আশংকা করছেন।
তবে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের ভাষ্য তিনি সন্ত্রাসের রাজনীতি করেন না, উন্নয়নের রাজনীতি করেন। হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কর্মকাণ্ডেই হরিরামপুরে আইনশৃংঙ্খলা পরিস্থির অবনতি হচ্ছে। অপর দিকে উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাষ্য তিনি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগচ্ছেন, তাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র হচ্ছে ও পাশাপাশি হরিরামপুরের আইন শৃংখলার চরম অবনতির জন্য সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমকেই দায়ী করেন।
সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নিবার্চনে তিনি এমপি হিসেবে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ও হরিরামপুরে একটি বালু মহল ইজারাকে কেন্দ্র করে এমপি মমতাজ বেগম ও তার অনুসারীরা তার উপর নাখোশ হয়েছে। এরই জের ধরে হরিরামপুরে তার অনুসারী আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি হয়রানীমূলক মামলা দায়ের করেছেন। ওই সব মামলায় তার ছেলেকে আসামি করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে জানান, হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ বালু মহল ইজারা নিতে এমপি মমতাজ বেগমের তার পিএসকে দিয়ে টেন্ডার দাখিল করেন। কিন্তু বালু মহলটি না পেয়ে মমতাজ বেগম ও তার অনুসারী ক্ষিপ্ত হয়েছেন। এর পর থেকে এমপি মমতাজ বেগম বালুমহলটি বাতিল চেয়ে ভূমি মন্ত্রনালয়ের সাধারন শাখা –২ কাছে গত ১১ মে একটি ডিও লেটার পাঠান। ওই ডিও লেটারের প্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রনালয়ের সাধারন শাখা–২ সহকারী সচিব মো. জসিম উদ্দিন পাটোয়ারি গত ১৮ মে (স্মারক নং ৩১.০০.০০০০.০৫১.৩৭.০৪৮.১৯.১০৮) মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে এককপি পত্র পাঠায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, জেলা প্রশাসকের পাঠানো পর বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট দফতরে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করে। বালুমহল বন্ধের কোন ধরনের হেতু নেই মর্মে ওই প্রতিবেদনের উল্লেখ্য করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে হরিরামপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনিত ঘঠেছে বলে দাবি করে দেওয়ান সাইদুর রহমান আরও বলেন, আইন শৃংখলা অবনতির জন্য নেপথ্যে রয়েছেন এমপি মমতাজ বেগম। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী জাতীয় সংসদ নিবার্চনে এর মারাত্বক প্রভাব পড়বে। এছাড়া তিনি এমপি মমতাজের বিরুদ্ধে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের দলে ভেড়ানোর অভিযোগ তুলে ধরেন।
সম্প্রতি এমপি মমতাজ বেগমের লোকজনের হাতে আহত ধুলশুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী কালাম বলেন, উপজেলা চত্বরে আসা মাত্র এমপি অনুসারী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লুৎফর রহমানের নেতৃত্ব ১৫–২০ জন তাকে রক্তাক্ত করেছে। এর পর থানায় নিয়ে পুলিশের সামনেই পুনরায় মারধর করা হয়। হামলায় আহত হলাম, আবার আমাকেই মামলার আসামি করা হলো। আমার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লিয়াকত আলী, বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আওলাদ হোসেন, জেলা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হায়দার আলী তারেক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাশার সবুজ, বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদুর রহমান ফরিদসহ শতাধিক নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অপর দিকে হরিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুমন কুমান আদিত্যর বক্তব্য নেওয়ার জন্য থানায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা ধরেননি।
জাহিদুল হক চন্দন/আফ/দীপ্ত নিউজ