বিজ্ঞাপন
বুধবার, আগস্ট ৬, ২০২৫
বুধবার, আগস্ট ৬, ২০২৫

প্রবাস থেকে ফিরেই কাঁধে মা-স্ত্রী-সন্তানের লাশ

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

ওমান থেকে প্রায় আড়াই বছর পর দেশে ফিরছেন মো. বাহার উদ্দিন। দেশে ফেরার আনন্দে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার’। তাকে বিমানবন্দরে আনতে যান তার স্ত্রী কবিতা, মেয়ে মীম, মা মোরশিদা বেগমসহ স্বজনরা।

কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, বাহার দেশে ফিরলেন ঠিকই, কিন্তু তার স্বপ্নটা রূপ নিয়েছে ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে। বাড়ি ফেরার পথে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যায় খালে। এতে প্রাণ হারান বাহারের মাস্ত্রীসন্তানসহ পরিবারের ৭ সদস্য।

বুধবার (৬ আগস্ট) ভোরে বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়াপুর ইউনিয়নের জগদীশপুর এলাকায় চৌমুহনীলক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেনওমান প্রবাসী বাহারের স্ত্রী কবিতা আক্তার (২৪), মেয়ে মীম আক্তার (), মা মুরশিদা বেগম (৫০), নানী ফয়েজ্জুনেছা (৭০), ভাতিজি রেশমা আক্তার () ও লামিয়া আক্তার () এবং বড় ভাইয়ের স্ত্রী লাবনী আক্তার (২৫)। তারা সবাই লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী এলাকার কাশারি বাড়ির বাসিন্দা।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন ফাহিম বলেন, ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে হঠাৎ দ্রুত গতিতে মাইক্রোবাসটি খালের পানিতে নেমে যায়। এর পরপরই চালক পানি থেকে বের হয়ে পালিয়ে যান। বাহার উদ্দিনসহ ৫জন গ্লাস ভেঙে বের হয়ে আসতে পারলেও বাকি ৭জন গাড়ির ভেতরে আটকা পড়েন। তারা প্রায় ২ ঘণ্টা পানির নিচে ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা ফায়ার সার্ভিসের কাছে ডুবুরি চাইলে তারা জানায়, এখানে ডুবুরি নেই। বেগমগঞ্জ ও মাইজদী থেকে দুটি ইউনিট এলেও তারা কাউকে উদ্ধার করতে পারেনি। পরে হাইওয়ে পুলিশ রেকার দিয়ে গাড়িটি ওঠানোর পর মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়।

বাহার উদ্দিনের আত্মীয় মো. সুমন বলেন, কীভাবে এ শোক সহ্য করব জানি না। পুরো পরিবারটা শেষ হয়ে গেল।

দুর্ঘটনার পর বাহার উদ্দীনের বাবা আব্দুর রহীম বলেন, ‘ড্রাইভার বারবার ঝিমাচ্ছিল। আমরা কয়েকবারই বলেছি, তুমি গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রয়োজনে ঘুমাও। সে বলে যে, না সমস্যা নেই; যাইতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘যাইতে পারব বলার পর রাস্তায় কয়েকবার এমন হয়েছে যে ঘুমাতে ঘুমাতে আবার ঝটকা দিয়ে সজাগ হতো। চৌমুহনী আসার পরও আমরা বলেছি তুমি দরকার হলে কতক্ষণ ঘুমিয়ে নাও। আমাদের এভাবে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ তোমার চোখে ঘুম বেশি। এভাবে বাংলাবাজার আসার পরও আমরা তাকে ঘুমাতে বলি। এরপর হঠাৎ ঘুম থেকে ঝটকা দিয়ে উঠে সে গাড়ি পাশের খালে ফেলে দেয়।’

আব্দুর রহীম বলেন, ‘গাড়িতে আমি, আমার ছেলে, আমার ছেলের বউ তিন জন, আমার শাশুড়ি, আমার স্ত্রী ও তিন নাতনী ছিলাম। এর মধ্যে আমরা ৪ জন বের হতে পেরেছি। বাকি সবাই মারা গেছে।’

দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বাহার উদ্দীন বলেন, গাড়ি খাদে পড়ে ডুবে যায়নি। নৌকার মতো ভাসছিল। আমি বারবার ড্রাইভারকে বলছিলাম, লক খুলতে। লক খুলে দিলে সবাই সাঁতার কেটে বের হয়ে যাবে। গাড়ি জাহান্নামে যাক, তুই আগে লক খোল। তবু সে খোলেনি। সে আস্তে করে জানালা দিয়ে বের হয়ে গেছে। পরে আমরা জানালা ভেঙে কয়েকজন বের হয়েছি। বাকি সবাই মারা গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি লক খুলতো তাহলে সবাই বেঁচে যেতো।’

বাহার উদ্দীন আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি এদের সবাইকে নিষেধ করেছিলাম। এরা অল্পবয়সি, এরা যাতে না আসে। এরা শোনেনি।’

চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন ভূঁইয়া বলেন, চালকসহ গাড়িটিতে মোট ১৩ জন ছিল। চালক পালিয়ে গেলেও গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। মরদেহগুলো উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, দুর্ঘটনার আগে ও পরের দুটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। একটি ছবি প্রবাসী বাহার উদ্দীনের ফেসবুক স্ট্যাটাস। এতে লেখা ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার।’

দুর্ঘটনার পর তার সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসের কমেন্টস সেকশনে রবিন হাসান নামে একজন একটি ছবি পোস্ট করেছেন। এতে দেখা গেছে, সাদা ব্যাগে মোড়ানো একটি মরদেহ নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন বাহার উদ্দীন।

 

এসএ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More