মানুষের মাঝে সুস্থতা ও রোগবালাই মুক্ত জীবনবোধ গড়ে তোলার সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সামাজিক আন্দোলন হিসেবে এই “লেটস ওয়াক” ডিজিটাল প্লাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে।
হাঁটাহাঁটিকে আরও জনপ্রিয় ও উৎসাহিত করার মাধ্যমে সমাজের সকল মানুষের শারিরীক–মানসিক সুস্থ্যতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, অসংক্রাম ব্যাধি প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি এবং সেই সঙ্গে যুব সমাজকে মাদক ও স্মার্ট ফোন আসক্তি থেকে দূরে রাখার জন্য ফিজিক্যাল একটিভিটি বা স্পোর্টসে আকৃষ্ট করার প্রাথমিক পদক্ষেপ এটি।
“Let’s Walk” ক্যাম্পেইনটি আমাদের “সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি”বা সমাজের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতার একটি প্রকাশ মাত্র।
আপনার জীবনটা যতই যান্ত্রিক হোক, আপনার প্রতিটি দিনে কাজের চাপ ও নানামুখী ব্যস্ততা যতই থাকুক, আপনার জন্য হাটাহাটির সময় বের করার নির্ভরযোগ্য একটি উপায় দেখিয়ে দেবার চেষ্টা করাটাই আমাদের অন্যতম উদ্দেশ বলেন পেজটির কো –ফাউন্ডার সাবরিনা নওরিন লিমু।
ফিজিক্যাল একটিভিটি বা শরীরচর্চা’র যতগুলি ফরম্যাট রয়েছে, আমার কাছে হাঁটাহাঁটিই সবচাইতে ভালো, সহজ ও নিরাপদ। সুস্থ্যতা–রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা, শরীরের ওজনকে নির্দিষ্ট সীমার মাঝে রাখা, অসংক্রামক রোগের প্রতিরোধ ও প্রো–একটিভ মানুষ হবার জন্য হাঁটাহাঁটির ভূমিকা অনস্বীকার্য। উচ্চ রক্তচাপ এর ঝুঁকিতে যারা রয়েছেন, তাদের জন্য প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি বা শরীরচর্চার পাশাপাশি শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা অতীব জরুরি।
হাঁটাহাঁটিকে কেন এতো জরুরি মনে করি?
আমি পড়াশোনা করেছি মেডিকেল সায়েন্সে, পোস্ট গ্রাডুয়েশন করেছি হেলথ এডুকেশন ও নিউট্রিশনে, ক্যারিয়ার করেছি পাবলিক হেলথে। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করি প্রায় ৩০ বছর। জাতীয় ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত থেকে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ফ্রি–ল্যান্স ক্রীড়া ধারাভাষ্য, উপস্থাপনা ও স্পোর্টস প্রোগ্রাম পরিচালনা করেছি প্রায় ৩ দশক– সেই সময়ে ফিজিক্যাল একটিভিটি/শরীরচর্চা– খেলাধূলার প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গন ও সামাজিক কাঠামোতে খেলাধুলা ও শরীরচর্চার গুরুত্ব নিয়ে এডভোকেসি সেমিনার–ওয়ার্কশপ–পলিসি লেভেল মিটিং এ সরব থাকার চেষ্টা করেছি।
পরবর্তী মনে হয়েছে আমার এইসব ব্যাকগ্রাউন্ডকে মিলিয়ে সমাজের জন্য এমন একটি কাজ করা– যে কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কোন না কোন কারণে এ ব্যাপারে ফোকাসটা খুবই কম।
বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে অসংক্রামক রোগে (ডায়াবেটিস, হার্টএটাক, স্ট্রোক, ক্যান্সার ইত্যাদি) মৃত্যুর হার প্রায় ৮০ ভাগ, লাইফস্টাইলে সামান্য কিছু পরিবর্তন এসব প্রতিরোধে অসামান্য অবদান রাখতে পারে। ফিজিক্যাল একটিভিটি বা শরীরচর্চা একটা বড় ভূমিকা পালন করতে পারে এসব রোগ প্রতিরোধে, আর ফিজিক্যাল একটিভিটির সবচাইতে সহজ ফরম্যাট হলো হাঁটাহাঁটি।
এই পেজে কি কি কনটেন্ট আছে?
Let’s walk with Dr Anupam Hossain ইউটিউব চ্যানেল এবং পেইজটিতে মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, — কোথায় হাঁটবেন, কিভাবে হাঁটাহাঁটি শুরু করবেন, শারিরীক ও মানসিক প্রস্তুতি, কখন–কতটুকু সময়, হাঁটার গতি কেমন হবে, কেমন জামা–ট্রাওজার ও জুতা পরে হাঁটবেন, পানি কতটুকু খাবেন, হাঁটার আগে–পরে কি খাবেন, কেন খাবেন ইত্যাদি। পাশাপাশি হাঁটাহাঁটির সাথে কোয়ালিটি অফ লাইফ –এর সম্পর্ক, পর্যাপ্ত ও সুশৃঙ্খল ঘুমের সম্পর্ক, রোড–ট্রাফিক এক্সিডেন্ট কমাবার সম্পর্ক, ছাত্র–ছাত্রীদের বুদ্ধিমত্তা ও পারফরমেন্সের সম্পর্ক, হজম –বদহজম–আইবিএস এর সম্পর্ক, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবার সম্পর্ক, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা ও মুড সুইং কমাবার সম্পর্ক, নন কমিউনিকেবল ডিজিসেস থেকে নিজেকে দূরে রাখার সম্পর্ক, শিশুর শারিরীক ও মানসিক বিকাশে হাঁটাহাঁটি / শরীরচর্চা বা খেলাধুলার সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে নাতিদীর্ঘ ভিডিও কনটেন্ট উপস্থাপন।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড় শহরে খেলার মাঠ ও পার্কের অবস্থা, সমস্যা–সম্ভবনা–চ্যালেঞ্জ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খোলা মাঠ ও বড় পার্কগুলির রক্ষণাবেক্ষণের আলোকে আমরা কিভাবে আরও হাঁটাহাঁটি বান্ধব শহর ও পার্ক গড়ে তুলতে পারি — এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও বিশেষজ্ঞ মতামত তুলে ধরা হয়ে থাকে লেটস ওয়াক পেইজে।
আপনি জানেন কি?
প্রতিদিন মাত্র ৩০/৪০ মিনিট হাঁটাহাঁটি আপনার জন্য কতটা উপকারী! আসুন ১ মিনিটে জেনে নিই ১০ টি উপকারের কথা –
# শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
# রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
# দুশ্চিন্তা কমায় ও মানসিক প্রশান্তি বাড়ায়।
# রক্তচাপ কমায়, খাবার হজমে সহায়তা করে।
# রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা স্বাভাবিক রাখে।
# অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
# ঘুমের কোয়ালিটি ও পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করে।
# হৃদযন্ত্রের সুস্থ্যতা ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
# ফুসফুসের অক্সিজেন ধারন সক্ষমতা বাড়ায়।
# মুড সুইং প্রতিরোধ করে, শরীর–মন চাঙ্গা রাখে।
চিকিৎসক হিসেবে ডা. অনুপম হোসেন কর্মজীবন শুরু করেন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ শিকদার উইমেন্স মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল এ। সেখানে তিনি কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে শিকদার মেডিকেল নার্সিং ইনস্টিটিউট এর ভাইস প্রিন্সিপালও ছিলেন
প্লাটফর্মটি তৈরী করার মূল উদ্দেশ্য ছিল ৩টি
১. মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা
২.নন কমিউনিক্যাবলে ডিজিস (অসংক্রামক রোগবালাই) প্রিভেনশন
৩. শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা
চলুন আজই মনস্থির করি, আপনার মনের অবস্থা, পারিপার্শ্বিকতা যেমনই থাকুক, কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করি, হাঁটার মাঝেই নিজের মনের আনন্দ–প্রশান্তি– সুস্থ্যতা খুঁজে পাবো, ইনশাআল্লাহ।
হাঁটাহাঁটির সময়টা একান্ত আপনার! নিজেকে সময় দিন, নিজের সাথে কথা বলুন,হাঁটাহাঁটির পুরো সময়টুকু হাঁসিমুখে উপভোগ করুন ,,,!
মনে রাখবেন হাঁটাহাঁটি আপনার সারা জীবনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও ফিটনেসের সঙ্গী!
অধ্যাপক ডা. অনুপম হোসেন
জনস্বাস্থ্য ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং
ক্রীড়া উন্নয়ন ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিষয়ক পরামর্শক