ট্রেনের ছয়টি রুটে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। সর্বনিম্ন ভাড়া বাড়ছে ৫ টাকা আর সর্বোচ্চ ২২৬ টাকা। পন্টেজ চার্জ সমন্বয় করে ছয়টি রুটে এই ভাড়া বাড়ানো হলো বলে জানা গেছে।
আগামী ২০ ডিসেম্বর থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর হবে। সেক্ষেত্রে ওইদিনের অগ্রিম টিকিট কিনতে গেলেও নতুন কার্যকর হওয়া ভাড়া পরিশোধ করতে হবে।
জানা যায়, নয় বছর পর এ ভাড়া বাড়ছে। সরাসরি ভাড়া না বাড়িয়ে এক্সট্রা ডিসট্যান্স অব পন্টেজ চার্জ আরোপ করে বিনিয়োগের অর্থ তুলছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এবার পুরনো সেতু, কালভার্টেও পন্টেজ চার্জ আরোপ করেছে সংস্থাটি। ১১টি সেতুতে নিয়মিতভাবে এ চার্জ কার্যকরের ফলে ২০ ডিসেম্বর থেকে সব যাত্রীবাহী ট্রেনের ভাড়া বাড়াচ্ছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। এতে সর্বোচ্চ ভাড়া বাড়ছে ২০০ টাকারও বেশি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত যাচাই–বাছাই ও আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয় ডিসেম্বরে। সাধারণ ট্রেন ও বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেনের জন্য আলাদা করে ভাড়া নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে। ঢাকা–চট্টগ্রাম–সিলেট–ময়মনসিংহ বিভাগ নিয়ে গঠিত রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল। রেলওয়ে সর্বশেষ ২০১৬–১৭ অর্থবছরে ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধি করেছিল।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান জানান, ‘পন্টেজ চার্জ আরোপের মাধ্যমে এ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে সব রুটে ভাড়া বাড়ছে না। কিছু রুটে ভাড়া বাড়ছে। আবার যে ভাড়া বেড়েছে, তা খুব বেশি নয়। এ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে মূলত পুরানো যেসব সেতু আছে ১০০ মিটারের বেশি, সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের জন্য।’
কোন রুটে কত টাকা ভাড়া
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ছয়টি রুটে ১১টি সেতুতে পয়েন্ট চার্জ আরোপ করা হচ্ছে। এগুলো হলো: ঢাকা–চট্টগ্রাম, ঢাকা–কক্সবাজার, ঢাকা–সিলেট, চট্টগ্রাম–সিলেট, চট্টগ্রাম–জামালপুর ও ঢাকা–দেওয়ানগঞ্জ।
ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটে আগে ৩৪৬ কিলোমিটার দূরত্ব ধরে ভাড়া দিতে হতো। এখন পন্টেজ চার্জ নির্ধারণের পর এ দূরত্ব হয়েছে ৩৮১ কিলোমিটার। ৩৫ কিলোমিটার দূরত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় এই রুটে মেইলের ভাড়া ১৩৫ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৫০ টাকা। ভাড়া বেড়েছে ১৫ টাকা। এ ছাড়া কমিউটার ও শোভন চেয়ারে ভাড়া ১৭০ ও ৪০৫ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৯০ ও ৪৫০ টাকায়।
ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটে বেশি চাহিদা রয়েছে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটের। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত স্নিগ্ধা টিকিটের ভাড়া ৭৭৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৫৭ টাকা। ভাড়া বেড়েছে ৮০ টাকা। এসি সিটের ভাড়া ৯৩২ থেকে বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৩০ টাকা। আবার এসি বার্থের ভাড়া এখন থেকে হবে এক হাজার ৫৯১ টাকা। বর্তমানে এসব আসনের ভাড়া এক হাজার ৪৪৮ টাকা।
এ রুটে বিরতিহীন ট্রেনে (যেমন সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস) স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া ৮৫৫ থেকে ৮৮ টাকা বেড়ে হয়েছে ৯৪৩ টাকা। প্রথম বার্থ ও এসি সিটের প্রতি আসনের ভাড়া এখন যথাক্রমে এক হাজার ১৩৩ ও এক হাজার ৭৪৬ টাকা। আগে ছিল যথাক্রমে এক হাজার ২৫ ও এক হাজার ৫৯০ টাকা।
কক্সবাজার ও পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের বর্তমানে স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া এক হাজার ৩২২ টাকা। এখন থেকে দিতে হবে এক হাজার ৪৪৯ টাকা। ভাড়া বেড়েছে ১২৭ টাকা। এসি সিটের ভাড়া এক হাজার ৫৯০ থেকে বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৭৪০ টাকা। আর এসি বার্থের ভাড়া এখন দুই হাজার ৪৩০ টাকা, নতুন ভাড়া অনুযায়ী তা হয়েছে দুই হাজার ৬৫৬ টাকা। আগের তুলনায় ভাড়া বেড়েছে ২২৬ টাকা।
ঢাকা–সিলেট রুটে মেইল ট্রেনের ভাড়া ১২৫ থেকে বেড়ে ১৪০ টাকা হয়েছে। কমিউটার ট্রেনের ভাড়া ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা করা হয়েছে। শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৫ টাকা বাড়িয়ে ৪১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া বর্তমানে ৭১৯ টাকা হলেও নতুন ভাড়া হবে ৭৮৮ টাকা। এসি সিটের ভাড়া ৮৬৩ টাকার জায়গায় এখন হবে ৯৪৩ টাকা। এসি বার্থের ভাড়া ১২৭ টাকা বেড়ে এক হাজার ৪৬৫ হয়েছে।
চট্টগ্রাম–জামালপুর রুটে মেইল ট্রেনের ভাড়া ১৭৫ থেকে ১৮৫ টাকা হয়েছে। শোভন চেয়ারের ভাড়া ৫২৫ থেকে ৫৪৫ টাকা করা হয়। স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ৩৪ টাকা। আগে ছিল এক হাজার সাত টাকা, এখন হবে এক হাজার ৪১ টাকা। এসি সিটের ভাড়া বেড়েছে ৪৬ টাকা। এক হাজার ২০৮ টাকার টিকিট কিনতে হবে এক হাজার ২৫৪ টাকায়। এসি বার্থের ভাড়া এক হাজার ৮৫৬ থেকে হয়েছে এক হাজার ৯২৫ টাকা।
ঢাকা–দেওয়ানগঞ্জ রুটে শোভন চেয়ার ২৫০ থেকে বেড়ে ২৫৫ টাকা হয়েছে। স্নিগ্ধা এখন ৪৮৯ টাকা যা আগে ছিল ৪৭৮ টাকা, এসি সিট ৫৮৭ এবং এসি বার্থ ৯২৪ টাকা নির্ধারিত হয়েছে। সূত্র: সময় নিউজ।