“পা ভেঙেছে, এই কষ্ট আমার কাছে বড় নয়। বড় কষ্ট হলো, এমন সময় কর্মসূচির মাঠে থাকতে পারছি না।”—হাসপাতালের বেডে শুয়ে এই কথাগুলো বলছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ–সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল নওরীন উর্মি। তার ডান পা ভাঙা, প্লাস্টার বাঁধা, তীব্র ব্যথা নিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকলেও কণ্ঠে ছিল দৃঢ়তা, চোখে অটল রাজনৈতিক বিশ্বাস।
সোমবার (১৪ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর পল্টনের নাইটিঙ্গেল মোড়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন নওরীন। কর্মসূচির এক পর্যায়ে হঠাৎ জনচাপের মধ্যে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। পড়ে যাওয়ার পর আর নিজে উঠে দাঁড়াতে পারেননি। সহকর্মীদের সহায়তায় দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তার ডান পায়ে চিড় শনাক্ত করে প্লাস্টার করে দেন। সেই সঙ্গে দিয়েছেন– এক মাসের পূর্ণ বিশ্রামের পরামর্শ।
নওরীনের সঙ্গে হাসপাতালে গিয়েছিলেন ছাত্রদল নেত্রী ফারহানা বিনতে ইভা। তিনি জানান, দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিলটি শাহবাগের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন নওরীন ও তিনি নিজেও। মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই মিছিলটি নাইটিঙ্গেল মোড়ে পৌঁছায়। সেখানে রোড ডিভাইডারের কারণে রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। হঠাৎ পেছন থেকে নেতাকর্মীদের চাপ বেড়ে গেলে একজন কর্মী ভারসাম্য হারিয়ে নওরীনের ওপর পড়ে যান। এতে নওরীনও মাটিতে পড়ে যান এবং সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে আসা লোকজনের চাপের মধ্যে পড়ে গুরুতর আঘাত পান।
ইভা বলেন, “ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটেছে যে নওরীন আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। তখনই অতিরিক্ত চাপের কারণে পদদলিত হয়। আমরা সঙ্গে সঙ্গেই তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে জানা যায়, তার ডান পা ভেঙে গেছে।”
নওরীন বলেন, “পা ভেঙেছে—এই কষ্ট আমার কাছে বড় কিছু না। বরং এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলের কর্মসূচিতে মাঠে থাকতে না পারাটা আমাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই পুরো মাসজুড়েই দলের নানা কর্মসূচি চলছে। বিএনপিকে ঘিরে চলছে নানা ষড়যন্ত্র। এমন সময় আমি বিছানায় পড়ে থাকব, এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।”
প্রসঙ্গত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্টের পাঁয়তারা, গুপ্ত সংগঠনের মব সৃষ্টির অপচেষ্টা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে সোমবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে ছাত্রদল। মিছিলটি কাকরাইল, মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব, কার্জন হল ও টিএসসি হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা, বিভিন্ন কলেজ, ইউনিট ও থানার নেতাকর্মীরা অংশ নেন।