হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাসপোর্ট, টিকিট, বোর্ডিং পাশ ছাড়াই কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে উঠে সিটে বসে যায় জুনাইদ মোল্লা (১০) নামের এক শিশু।
গেল সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট তখন (কেইউ–২৮৪) উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। প্লেনের দরজাও বন্ধ হয়ে গেছে। এসময় ৮–৯ বছরের একটি ছেলে প্লেনের ভেতরে হাঁটাচলা করছিল। কেবিন ক্রু শিশুটিকে সিটে বসার পরামর্শ দেন। তখন শিশুটি পাসের সিটে বসে পড়ে।
বিমানবন্দরে যাত্রীদের প্রবেশ করতে প্রথমেই পার হতে হয় নিরাপত্তা তল্লাশি। পাসপোর্ট ও বোডিং পাস দেখিয়ে পার হতে হয় ইমিগ্রেশন। এরপর আরও একটি চেক– সেখানে হ্যান্ড ব্যাগ, মানিব্যাগসহ অন্যান্য তল্লাশি শেষে অনুমতি মেলে বিমানে উঠার।
পুরো ফ্লাইটটির ৩৩০ আসনে যাত্রী পূর্ণ থাকায় কেবিন ক্রুরা ওই শিশুটিকে কোনো সিট দিতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে আসন ছাড়া কীভাবে শিশুটি ফ্লাইটে উঠল এ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তাকর্মীরা ছুটে আসেন ফ্লাইটে। এরপর বেরিয়ে আসে শাহজালালের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভয়াবহ চিত্র। এ ঘটনায় কুয়েত এয়ারওয়েজের কেইউ–২৮৪ ফ্লাইটটি প্রায় আধা ঘণ্টা দেরিতে ঢাকা ত্যাগ করেছে। সেদিন দুপুরে বিমানবন্দরের ডিউটি সিকিউরিটি অফিসার (ডিএসও) খুরশিদা খাতুন বিমানবন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এরপর শিশুটির অভিভাবকদের থানায় ডেকে পাঠানো হয়।
এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে দেখছেন, কীভাবে শিশুটি বিমানবন্দরে প্রবেশ করেছিল এবং ফ্লাইটে উঠেছিল। সিসিটিভিতে দেখা যায়, ইমিগ্রেশন, অ্যাভসেক তল্লাশি ও সিকিউরিটি চেক না করে শিশুটি নির্বিঘ্নে ফ্লাইটে উঠে যাচ্ছে। এটি দেখে অবাক হয়ে পড়েন সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও বিমানবন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে বহনকারী ভিভিআইপি ফ্লাইটটি এয়ারপোর্ট ত্যাগ করার মাত্র ১০ ঘণ্টা পর বিমানবন্দরের এমন চিত্র পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
এটি শুধু কোনো অ্যাডভেঞ্চার বলে উড়িয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। এর সঙ্গে অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে বলে তাদের ধারণা। কিংবা বিমানবন্দরের কোনো আদম পাচার সিন্ডিকেটের হাত থাকতে পারে এর সঙ্গে। কারণ ১০–১২ বছরের অজপাড়াগাঁয়ের একটি শিশুর পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয় বিমানবন্দরের এত গেট ডিঙিয়ে ফ্লাইটে ওঠা। কেউ না কেউ তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছে। কিংবা পুরো ঘটনাটি সুপরিকল্পিতও হতে পারে।
এদিকে ঘটনায় বুধবার বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১০ জনকে বিমানবন্দর থেকে প্রত্যাহার করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ(বেবিচক)। একই সঙ্গে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও বেবিচক সূত্র জানিয়েছে।
শিশু জোনায়েদ মোল্লার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মকসুদপুরে। ঘটনার পর তার গ্রামের বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছিল। পরে তার চাচা মো. ইউসুফ মোল্লা থানায় আসলে তার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে শিশুটিকে।
মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ