পার্বত্য অঞ্চলে চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করতে সেখানে গেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় রাজধানীর তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে রওনা হয়ে তারা বেলা ১১টায় রাঙামাটিতে পৌঁছান।
এই তিন উপদেষ্টার মধ্যে রয়েছেন— স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা (অব.) রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। তারা সংঘাতময় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের কথা রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে রাঙামাটির রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পরে বিকেল ৩টায় খাগড়াছড়িতে একই ধরনের একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে, শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে রাঙামাটির জিমনেশিয়াম চত্বর থেকে পাহাড়িদের একটি বড় মিছিল বনরূপা এলাকায় গেলে সেখানে তাদের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপের অভিযোগ ওঠে। এরপর বিক্ষুব্ধ মিছিলকারীরা বাঙালিদের কয়েকটি দোকানে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। পরে মিছিল থেকে বাস ও ট্রাক ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বাঙালিরাও লাঠিসোঁটা হাতে রাস্তায় নেমে আসে এবং বনরূপা এলাকায় পাহাড়িদের দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। শহরের হ্যাপি মোড়ের আশেপাশে দুই পক্ষ অবস্থান নেয়, পরিস্থিতি চরম উত্তেজনায় পৌঁছায়।
পুলিশ জানিয়েছে, রাঙামাটিতে সকালে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির যৌথ টহল শুরু হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) বলেছেন, তারা মাঠে কাজ করছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাদিয়া আক্তার জানান, ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ জন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৭ জনের অবস্থা গুরুতর।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুপুর দেড়টা থেকে রাঙামাটি পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় মোটরসাইকেল চুরি নিয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর এক যুবক মো. মামুনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করার ঘটনায় সহিংসতার সূত্রপাত হয়। এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর দীঘিনালায় একটি বিক্ষোভ মিছিলের ওপর ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের হামলায় গুলিবর্ষণ ও দোকানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সহিংসতার ঘটনায় সরকার অত্যন্ত দুঃখিত এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সহিংসতায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে।
এমএম/ আল/ দীপ্ত সংবাদ