পাবনার ঈশ্বরদীতে রেল ক্রসিং পারাপারের সময় মালবাহী দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। একটি ইঞ্জিন ও দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে ঢাকা–খুলনা রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
এ ঘটনায় তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) রাত ১২টার দিকে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন এলাকায় ঘটে দুর্ঘটনা। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহত বা আহত এর খবর পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, একটি ইঞ্জিন ও দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে আছে এবং ট্রেনের চাকা ভেঙে রেল লাইনের উপর পড়ে আছে। ঈশ্বরদী–বানেশ্বর মহাসড়কের মধ্যবর্তী ঈশ্বরদী শহরের রেল গেটটি বন্ধ রয়েছে এই দুর্ঘটনার কারনে। ফলে রেলগেটের উভয়পাশে দীর্ঘ যানযটের সৃষ্টি হয়েছে। ঈশ্বরদী থানা পুলিশ যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করছে।
ঘটনার পরপরই ঈশ্বরদীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুদীপ কুমার দাস, সহকারি কমিশনার (ভূমি) টি এম রাহসান কবীর ও ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, একটি তেলবাহী ট্রেন পার্বতীপুরে তেল নামিয়ে দিয়ে খুলনার দিকে যাবার পথে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে এসে দাঁড়ায়। ঘটনার সময় পাথর বোঝাই একটি মালবাহী ট্রেন ভারত থেকে ঢাকা যাবার পথে একই স্টেশনে দাঁড়ায়। এ সময় পাথর বোঝাই ট্রেনটি শানটিং করার সময় (বগি এক লাইন থেকে আরেক লাইনে নেওয়ার সময়) তেলবাহী ট্রেনের সাথে ধাক্কা লাগে। তখন তেলবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন ও মালবাহী ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
আরো জানান, ঘটনার পরপরই উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেন বগি উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে৷ ভোর পাঁচটা নাগাদ উদ্ধার কাজ শেষ হয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে পারে বলে জানান তিনি।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ব্যবস্থাপক শাহ সূফী নুর মোহাম্মদ জানান, ঈশ্বরদী লোকোমোটিভ থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন ইতিমধ্যেই রওনা করেছে। আমরা প্রাথমিকভাবে রেলগেটের কারনে যে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে সেটি ক্লিয়ার করবো। আশা করছি ৪০ মিনিটের মধ্যে এটুকু ক্লিয়ার হয়ে যাবে। কিছু লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেগুলো ৩–৪ ঘন্টার মধ্যে মেরামত হয়ে যাবে। আপাতত খুলনা থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে অন্যান্য রুটে ট্রেন চলাচলা স্বাভাবিক আছে।
দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, পারবর্তীপুর থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে মালবাহী একটি ট্রেন ঈশ্বরদী স্টেশন থেকে বের হয়। কিন্তু এটি বের হওয়ার কথা ছিল না। এবং অপর একটি ট্রেন শান্টিং করছিল। ফলে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করছি। তদন্ত কমিটি করে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার পরে বিস্তারিত জানা যাবে। প্রাথমিকভাবে আমরা স্টেশন মাস্টার, পারবর্তীপুর থেকে খুলনাগামী ট্রেনের এলএম ও এএলএম কে সাস্পেনশন করা হয়েছে।
এদিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ব্যবস্থাপক শাহ সূফী নুর মোহাম্মদ জানান, ঈশ্বরদীর ট্রেন দুর্ঘটনায় অসতর্কতার জন্য প্রাথমিকভাবে এ ট্রেনের চালক, সহকারী চালক এবং অন–ডিউটি সহকারী স্টেশন মাস্টারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের থেকে লিখিত জবাব চাওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, ট্রেন দুর্ঘটনা গভীরভাবে তদন্ত করতে সিনিয়র সহকারী সংকেত প্রকৌশলী, সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা, সহকারী যান্ত্রিক প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলী সমন্বয়ে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শামসুল/ আল / দীপ্ত সংবাদ