আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যে পাকিস্তানের করাচি সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। এর মাধ্যমে চীনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে বাংলাদেশ। বিষয়টি চূড়ান্ত করতে দুই দেশের কর্মকর্তাদের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
দীর্ঘ দুই দশক পর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ–পাকিস্তান যৌথ ইকোনমিক কমিশনের (জেইসি) নবম বৈঠকে করাচি সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের বিষয়ে প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছেছে দুই দেশ। ফলে বাংলাদেশ চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যেও পাকিস্তানের এ বন্দরটি ব্যবহার করতে পারবে। তবে বন্দর ব্যবহারের প্রক্রিয়া ও সময়সীমা নির্ধারণ হবে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে, যার দিন–তারিখ এখনও ঠিক হয়নি।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। পাকিস্তানের ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক। সর্বশেষ ২০০৫ সালে জেইসির অষ্টম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, করাচি সমুদ্রবন্দর ব্যবহারে উভয় পক্ষই আগ্রহ দেখিয়েছে, বিশেষ করে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে উদ্যোগ এসেছে বেশি। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বিষয়টির আর্থিক ও প্রযুক্তিগত দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এরপরই বোঝা যাবে, করাচি বন্দর ব্যবহার বাংলাদেশের জন্য কতটা লাভজনক হতে পারে।
এর আগে জেইসির প্রস্তুতি বৈঠকে জানানো হয়, চীনের সঙ্গে বাণিজ্যসহ অন্যান্য দেশের পণ্য পরিবহনে করাচি বন্দর ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। এজন্য বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ও পাকিস্তান শিপিং করপোরেশনের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের বিষয়ে দুই পক্ষই আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দুই দেশের মধ্যে নৌ চলাচল, আকাশপথের যোগাযোগ বাড়ানোসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কৃষি, বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি ও খাদ্য ইত্যাদি নিয়ে আলাদা আলাদা আলোচনা হয়েছে। এগুলো দুই দেশের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পাকিস্তানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে এ আলোচনার ফলে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বাড়বে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। আমরা বাংলাদেশ থেকে পাট, ওষুধ নেয়ার বিষয় আলোচনা করেছি।
বৈঠক শেষে হালাল বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ও পাকিস্তান হালাল অথরিটি (পিএইচএ)-এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। বাংলাদেশের পক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাকসুরা নূর এবং পাকিস্তানের পক্ষে ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশনার ইমরান হায়দার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এ ছাড়া পাকিস্তানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন রয়েছে। এখন প্রয়োজন অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়ন।
পাকিস্তানের মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভাবনাগুলো পুরোপুরি কাজে লাগানো হয়নি। বাণিজ্য সুবিধা বাড়ানোর মাধ্যমে এই সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করছি।