গত ২ অক্টোবর থেকে সুইডেনের স্টকহোমে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করছে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকাল পৌনে ৪টায় ঘোষণা করা হয় চলতি বছরের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী তিন বিজ্ঞানীর নাম। তারা হলেন– পিয়েরে অ্যাগোস্টিনি, ফেরেঙ্ক ক্রাউস এবং অ্যানি এল’হুলিয়ার।
নোবেল পুরস্কার জয়ের খবর দেয়ার জন্য অধ্যাপক অ্যানি এল’হুলিয়ারকে যখন কল দেয়া হয় তখন তিনি ব্যস্ত ছিলেন ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস লেকচারে। একাধিক কল দেয়ার পরে ক্লাস চলাকালীন কল রিসিভ করেননি তিনি। ক্লাস বিরতিতে আবার কল এলে তিনি রিসিভ করেন। নোবেল কর্তৃপক্ষ থেকে অ্যাডাম স্মিথ নামের এক ব্যক্তি অপর প্রান্ত থেকে কথা বলার জন্য সময় চান। অ্যানি জানান, আমি একটু ব্যস্ত, শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছি।
পরে কিছুক্ষণ পর কল দেয়া সেই ব্যক্তি অ্যানির কাছ থেকে দুই থেকে তিন মিনিট সময় দেয়ার অনুরোধ জানালে কথা বলার সম্মতি দেন অধ্যাপক অ্যানি এল’হুলিয়ার। পরে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে নোবেল পুরষ্কার জয়ের সংবাদ দেন কলদাতা অ্যাডাম স্মিথ। প্রতিউত্তরে অ্যানি এল’হুলিয়ার তাকে ধন্যবাদও জানান।
চলতি বছরে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া তিন জনের মধ্যে একজন অ্যানি এল’হুলিয়ার। পেশায় তিনি সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক।
ক্লাস লেকচারে ব্যস্ত থাকার কথা শুনে কলদাতা জানতে চান তিনি এই সুখবরটি তার শিক্ষার্থীদের জানাবেন কি না? উত্তরে তিনি বলেন, তাদেরকে অবশ্যই জানাবো। তারা জানলে আশা করি অনেক খুশি হবে। এটা অবশ্যই তাদের জন্য অনেক মজার বিষয় হবে। তবে আমাকে অবশ্যই আমার ক্লাসের লেকচারে ফিরে যেতে হবে।
অ্যানি এল’হুলিয়ারকে পুরস্কারের সংবাদ দেওয়ার সেই ফোন কলের রেকর্ডটিও ফেসবুকে পাবলিশ করেছে নোবেল প্রাইজ কর্তৃপক্ষ। যেখানে শোনা যায় তিনি ক্লাসের জন্য নিজের ব্যস্ততা প্রকাশ করছেন।
পদার্থের ইলেকট্রন ডাইনামিকস গবেষণায় আলোর অ্যাটোসেকেন্ড স্পন্দন তৈরির পরীক্ষণলব্ধ প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণার জন্য তাদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়। রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের মহাসচিব হান্স এলেগ্রেন বলেন, নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীদের কাজটি ছিল পদার্থের ইলেকট্রন ডায়নামিকস গবেষণায় আলোর অ্যাটোসেকেন্ড স্পন্দন তৈরির পরীক্ষামূলক পদ্ধতি।
এই বছরের নোবেলজয়ী পদার্থবিদরা অল্প সময়ের আলোকস্পন্দন তৈরির উপায় বের করেছেন। স্পন্দনের সময়টি এতটাই ক্ষুদ্র যে, এর মাধ্যমে ইলেকট্রনের দ্রুত বেগে নড়াচড়ার ছবিও তোলা যায়। গ্যাসের ভেতরকার পরমাণুর সঙ্গে লেজার লাইটের মিথস্ক্রিয়ায় সৃষ্ট নতুন এক ধরনের প্রভাব আবিষ্কার করেন ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী অ্যান ল’হুইলিয়ার। পিয়েরে অ্যাগোস্টিনি ও ফেরেঙ্ক ক্রাউস দেখিয়েছেন, আগে যত স্বল্প সময়ে আলোক স্পন্দন বা পালস তৈরি করা সম্ভব বলে মনে হয়েছিল, তার চেয়েও ছোট স্পন্দন তৈরি করা সম্ভব।
রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি বলেছে, এই বিজ্ঞানীরা পরমাণু এবং অণুর ভেতরে ইলেকট্রনের জগত অন্বেষণে বিশ্বমানব সভ্যতাকে নতুন পথ দেখিয়েছেন।
আশা করা হচ্ছে, এই আবিষ্কারটির মধ্য দিয়ে ইলেকট্রনিক্সকে আরো ভালোভাবে বোঝা এবং রোগ নির্ণয়ের নতুন দিক উন্মোচিত হবে।একইসঙ্গে, উদ্ভিদের খাদ্য উৎপাদন বা সালোকসংশ্লেষণের মতো জৈবিক প্রক্রিয়াগুলোকে আরো বিশদভাবে বোঝার সুযোগ তৈরি হবে।
নোবেলজয়ী এই তিন বিজ্ঞানীকে একটি নোবেল মেডেল, একটি সনদপত্র এবং মোট ১১ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা দেওয়া হবে। এ বছর নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য ১০ মিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে ১১ মিলিয়ন ক্রোনা করা হয়েছে। একই ক্যাটাগরিতে একাধিক নোবেলজয়ী থাকলে অর্থমূল্য অর্থাৎ ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনাকে ভাগ করে দেয়া হবে।
এছাড়াও,বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে নোবেল প্রাইজ কর্তৃপক্ষ। নোবেল প্রাইজ নামক ভেরিফাইড পেজে অ্যানি এল’হুলিয়ারের ফোনে কথা বলার একটি ছবি পোস্ট দিয়ে বলা হয়েছে, একজন নিবেদিত প্রাণ শিক্ষকের গল্প! পদার্থবিজ্ঞানে ২০২৩ সালের নোবেল পুরস্কার পাওয়া অ্যানি এল’হুলিয়ারকে তার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আলাদা করা যায়নি। যখন আমাদের নতুন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ীকে কল দেওয়া হয় তখন তিনি লুন্ড ইউনিভার্সিটিতে লেকচারে ব্যস্ত ছিলেন। পরবর্তীতে এক পর্যায়ে তিনি লক্ষ করেন তার ফোনে একাধিক মিস কল রয়েছে। অতঃপর ক্লাস বিরতিতে ফোন রিসিভ করেন তিনি। তবে পুরস্কারের খবরের পর, এল’হুলিয়ার পুনরায় তার শিক্ষার্থীদের কাছে ফিরে যান।
মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ