আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। আর সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যা পাওয়া বিএনপি চায় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে। কাজেই নিষেধাজ্ঞা আর ভিসানীতি কার ওপর প্রয়োগ হয় সেটাই দেখা হবে।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কী বিপদে আমরা আছি, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ইউরোপের নেতাদের আমরা তো দাওয়াত করি না। কোথা থেকে এত মেহমান আসে। ইউরোপ–আমেরিকার মেহমান না বলে চলে আসে। আসতে চান আমাদের বলেন, আমরা আদর যত্ন করে রাখব। কী জানতে চান বলেন, প্রয়োজনে আমাদের জনগণের সঙ্গে কথা বলেন। আপনারা কথা বলেন, ধমক মারেন, নিষেধাজ্ঞা দেন, ধমক দেন, এখন আবার ভিসানীতি দেন। কিন্তু এই হুমকি বিএনপির ব্যাপারে কেন বলেন না। ওখানে কি ভিসানীতি নেই?
আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আপনাদের তো মূল কথা নির্বাচনে যে বাধা দেবে, তার বিরুদ্ধে ভিসানীতি। এই কাজ তো বিএনপি করছে। আমরা তো করছি না। আমরা তো নির্বাচন চাই, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। নির্বাচনের আগে পরে শান্তি চাই। যারা নির্বাচনের নামে আগুন সন্ত্রাসের পরিকল্পনা করবে, আমরাও দেখব এই নিষেধাজ্ঞার মানে কী, এই ভিসানীতি কার বিরুদ্ধে প্রয়োগ হবে।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তারেক রহমানকে বলেন, সাহস থাকলে দেশে আসতে। রাজপথে ফয়সালা হোক। আদালতের রায় আছে তার বক্তৃতা অনলাইন–অফলাইনে কোথাও প্রকাশ করা যাবে না। প্রতিদিনই তিনি এগুলো করে যাচ্ছেন, এর কি কোনো বিচার নেই? ইউরোপ আমেরিকার গণতন্ত্রের নেতারা এই ফ্যাসিস্টের তৎপরতা দেখেন না। তারেকের বিষয় দেখেন না?
মন্ত্রী বলেন, কানাডার আদালত বিএনপিকে পাঁচবার সন্ত্রাসী বলেছে। বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিদেশেও চিহ্নিত। এই টেরোরিস্টদের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ। আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ। আসুন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভোট দেব। স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পতাকাকে উড্ডীন করব।
কাদের আরও বলেন, তারা এখন বলে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র, ফ্যাসিবাদী কাকে বলে। এটার পুরো চরিত্রই বিএনপির ক্ষমতার আমলকে পুরো ফুটিয়ে তোলে। ফ্যাসিবাদের জ্বলন্ত প্রমাণ বিএনপি। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র তারা করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলা মুক্ত করে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আজকে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টানা ১৫ বছর চলে গেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বল্পোন্নত দেশ উন্নয়নশীল মর্যাদা পেতে যাচ্ছে। আজ বাংলাদেশের অর্জন পুরো বিশ্বে বিস্ময়। এটাই শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় অপরাধ। বাংলাদেশে গণতন্ত্র, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, নির্বাচন ব্যবস্থা যেটা শেখ হাসিনার হাতে জাতি পাচ্ছে, বিএনপি স্বপ্নেও সেটা পেরেছে?
কাদের আরও বলেন, তোমরা (বিএনপি) গণতন্ত্র ধ্বংস করছো, কোটি কোটি অর্থ পাচার করেছো, হাওয়া ভবনের লুটপাট করছো। দুর্নীতির কথা তোমাদের মুখে শোভা পায় না, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বিএনপি। তারাই এ দেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, ভোট চুরির রাজনীতি শুরু করেছে, ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করেছে। তাদের মুখে এখন গণতন্ত্রের সুবচন শুনতে হবে। গণতন্ত্র ধ্বংস করে গণতন্ত্রের কথা বলে। দুর্নীতিতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে তারা দুর্নীতির কথা বলে। ঠাকুর ঘরে কে রে? ফখরুলের অবস্থা হয়েছে এখন তাই, কয়েকদিন ধরে দেখেছি, কান্নায় বুক ভেসে যায়। পানি খেতে খেতে চোখের পানি। আরও কান্না আছে। এক দফা তো খাদে মরণ যন্ত্রণায় ছটফট করে, এটা কি খাদ থেকে উঠতে পারবে? গরুর হাটের পদযাত্রার বারোটা বেজেছে। এখন কখনও সুর গরম, কখনও নরম।
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপির কর্মীরা হতাশ ছিল গ্রামে গ্রামে, তাদের পাঁচ হাজার টাকা করে দিয়ে প্রতি সমাবেশে আসতে বলেছে। কাঁথা–বালিশ, মশারি, লোটা কম্বল নিয়ে আসতে বলেছে। ফখরুল বলেছে, অতিরিক্ত জামা–কাপড় লাগবে। মনে মনে স্বপ্ন ছিল পল্টনে বসেই যাবে। ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসনে দেখা না দিলে তারা উঠবে না। ফখরুল সাহেব, তত্ত্বাবধায়ক চাইলে পাকিস্তানে যান। দুনিয়ার কোথাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতার লিবিং লিগ্যাসি হিসেবে এই জনপদ যতদিন থাকবে তার নাম প্রতিধ্বনিত হবে। এটা বোধহয় সৃষ্টিকর্তার অমর সৃষ্টি। এই দেশের সবচেয়ে বড় সৃষ্টি, বঙ্গবন্ধুর মুখ নিঃসৃত শব্দ মুক্তি আর স্বাধীনতা। স্বাধীনতার লিগ্যাসি বঙ্গবন্ধুর নামেই উচ্চারিত হবে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম এটাও তার লিগ্যাসি, এটা বহন করছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসের এই লিগ্যাসি আরও পরিষ্কার হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।
মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ