আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের (এআইউবি) মিডিয়া অ্যান্ড ম্যাস কমিউনিকেশন (এমএমসি) বিভাগ ৪ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার “নিউজরুমে উদ্ভাবন: সাংবাদিকতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা” শীর্ষক ওয়েবিনার আয়োজন করে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কী ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসছে তা নিয়ে আলোচনার ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম জুমে ওয়েবিনারটি আয়েজিত হয় ।
ওয়েবিনারে কী-নোট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের সর্ববৃহৎ নিউজ এজেন্সি প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার ডিজিটাল সার্ভিসেস, সোশ্যাল মিডিয়া, মাল্টিমিডিয়া ও ফ্যাক্ট চেকিং-এর প্রধান প্রত্যুষ রঞ্জন, আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এএফপি বাংলাদেশের ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম এবং ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও মিডিয়া প্রশিক্ষক আঙ্গুর নাহার মন্টি।
এআইইউবি-এর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আবদুর রহমান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের প্রফেসর এবং এমএমসি বিভাগের উপদেষ্টা ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া।
এমএমসি বিভাগের সমন্বয়ক আফরোজা সুলতানার উষ্ণ অভ্যর্থনা দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ড. মোঃ আবদুর রহমান সাংবাদিকতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাবনার উপর গুরুত্বারোপ করেন। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তিনি এথিক্স ও হিউম্যান সুপারভিশনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সতর্ক করেন। তিনি এই প্রযুক্তি সাথে খাপ খাইয়ে নিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য স্কিল ডেভেলপমেন্টের বিকল্প নেই বলেও মনে করেন। এজন্য প্রশিক্ষণ এবং নির্দেশিকা প্রদানে একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকার উপর জোর দেন।
অধ্যাপক ড. শফিউল আলম ভূঁইয়া, সাংবাদিকদের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন এবং সেই সাথে এআই নির্ভরতার সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, গ্লোবাল সাউথের সমাজ, সংস্কৃতি এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে এআই প্রযুক্তির প্রভাব পড়ছে কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণের জন্য এই অঞ্চলে কোনো ব্যবস্থা নেই।
কী-নোট স্পিকার প্রত্যুষ রঞ্জন এআই এই মুহূর্তে নিউজরুমে কতটা ব্যবহৃত হচ্ছে, কী কী কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে তার পূর্নাঙ্গ বিবরন তুলে ধরেন। তিনি বলেন কন্টেন্ট তৈরি, তথ্য বিশ্লেষণ, তথ্য অনুসন্ধান, নিউজ পার্সনালাইজেশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা বর্তমানে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তবে এআই বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন, যেমন, ফেক কন্টেন্ট, মিস-ইনফরমেশান, ডিস-ইনফরমেশান, বিশেষ করে ডিপফেকের মত ক্ষতিকর কন্টেন্ট এর বিষয় তিনি উল্লেখ করেন।
আলোচনায় এএফপি বাংলাদেশের ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম বাংলাদেশের নিউজরুমে কতটা ব্যবহৃত হচ্ছে সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন এখানে এআই এখনো সাংবাদিকরা নিউজের কাজে কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শিখছে। কিছু ক্ষেত্র যেমন, ট্রান্সশ্লেশান, ট্রান্সক্রিপশান, ইমেজ তৈরি ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হলেও এআই এর পরিপূর্ণ ব্যবহার এখানকার নিউজরুমে সম্ভব নয়। তার কারণ হিসেবে তিনি তথ্য স্বল্পতা, তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে মিডিয়া হাউজগুলোর অনাগ্রহ এবং পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোর অভাবের বিষয় উল্লেখ করেন।
সাংবাদিক আঙ্গুর নাহার মন্টি ভুল তথ্য এবং বিভ্রান্তি মোকাবেলা করার জন্য সাংবাদিকদের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের স্কিল উন্নত করার অপরিহার্যতার উপর জোর দেন। তিনি ভবিষ্যত সাংবাদিকদের নৈতিক এবং দায়িত্বশীল করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একাডেমিয়ার ভূমিকার উপরও গুরুত্ব দেন।
এমএমসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসরিন আক্তার ওয়েবিনারটি পরিচালনা করেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন এআইউবির বিভিন্ন বিভাগের প্রধান, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী। ওয়েবিনারটি সমাপ্তী হয় প্রশ্নোত্তর পর্বের শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে।