শনিবার, নভেম্বর ৯, ২০২৪
শনিবার, নভেম্বর ৯, ২০২৪

নাশকতা মামলার আসামী কলেজ শিক্ষক

বিশেষ ক্ষমতা আইনে বারবার জেলে যাওয়া সাতক্ষীরা সিটি কলেজের দর্শণ বিভাগের শিক্ষক জামায়াত নেতা জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শণ ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর, মাউশি এবং দুদক তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলেও অদ্যাবধি তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি।

অভিযোগ তিনি কখনো স্থানীয় সাংসদ আবার কখনো জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ পর্যায়ের নেতার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে[ তুলে ফটোসেশন করে নিজেকে নব্য আওয়ামী লীগার পরিচয়ে রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন।

সাতক্ষীরা সিটি কলেজ সূত্রে জানা গেছে, চার দলীয় জোট সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধী মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকাকালিন মৃত্যুবরণকারি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক সিটি কলেজে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি থাকা কালীন সময়ে ২০০২ সালের ২৪ জুলাই নিয়োগের রেজুলেশনের প্রেক্ষিতে ওই বছরের ২৮ জুলাই দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে ১৯ ডিসেম্বর এক বিতর্কিত নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে সাবেক অধ্যক্ষ ইমদাদুল হক, জামায়েত নেতা ও মামুন হত্যাসহ কয়েক ডজন মামলায় অভিযুক্ত আসামি উপাধ্যক্ষ মোঃ শাহিদুল ইসলাম সহ ১৪ জন শিক্ষককে নিয়োগের সুপারিশ করেন। সেই নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশের আলোকে মোঃ জাহাঙ্গীর আলম দর্শন বিভাগে ৪র্থ শিক্ষক হিসেবে ২০০৩ সালের ৬ জানুয়ারি যোগদান করেন। এ সময়ে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবল কাঠামো অনুসারে প্যাটার্ন বহির্ভুত শিক্ষক ছিলেন কারণ তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত ছিলেন খলিলুর রহমান।

জাহাঙ্গীর আলমের নিয়োগ ও যোগদানের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা পরিদর্শক মোঃ মুজিবর রহমান এবং অডিট অফিসার মোঃ ফরিদ উদ্দীন গত ২০১১ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর সাতক্ষীরা সিটি কলেজ পরিদর্শন ও নিরীক্ষা করেন। ২০১২ সালের ৩ জানুয়ারি উপ পরিচালক আবদুল মতিনের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, এক দিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোহর আলী পারিবারিক কারণে নিজের একক সিদ্ধান্তে ২০০২ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আব্দুর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেন। আব্দুর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদানের বিষয়ে কমিটির কোন রেজুলেশন নেই। ফলে আব্দুর রশিদের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন অবৈধ।

সূত্রটি আরো জানান, বর্তমানে দুর্নীতি ও জালিয়াতি মামলায় কারাগারে থাকা সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ আবু সাঈদ ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি যোগদানের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক ২০১২ সালের নিরীক্ষা প্রতিবেদন উপেক্ষা করে তথ্য জালিয়াতি ও তথ্য গোপন করে সভাপতির সঙ্গে যোগসাজস করে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়ে জাহাঙ্গীর আলমকে ২০১৫ সালের পহেলা নভেম্বর এমপিওভুক্ত করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তার ইনডেক নং ৩০৯১৯৪৯।

এমপিভুক্তির শর্তানুসারে দর্শণ বিভাগে বিগত তিন বছরে কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী ছিলনা। এরপর এই জাহাঙ্গীর আলমকে সক্সেগ নিয়ে অধ্যক্ষ আবু সাঈদ নিয়োগ ও যোগদান সম্পর্কিত তথ্য জালিয়াতি ও তথ্য গোপন করে ২০১৮ সালের ২৮ আগষ্ট এবং ২০১৯ সালের ১২ মার্চ এর পরিপত্রের আলোকে ধারাবাহিকভাবে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত আরো ২০ জন শিক্ষকের এমপিওভুক্ত করেছেন।

অধ্যক্ষের দুর্নীতির অন্যতম সহযোগী ২০১৬ ও ২০১৭ সালের দুটি বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলার (নশিকতা) আসামী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসের পর থেকে সাতক্ষীরা সদরের চৌরঙ্গী মোড়ে ৭০ লক্ষ টাকায় কেনা ৫ কাঠা জমির উপর বহুতল বিশিষ্ট বাড়ি, জজ কোর্টের পিছনে, মেহেদীবাগে কোটি টাকার জমি এবং খুলনা জেলাধীন কয়রা থানায় নিজ গ্রামে প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকার জমি(সাড়ে আট বিঘা কৃষি জমি) ক্রয়সহ স্বনামেবেনামে অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তিনি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ অর্থ প্রতারনাকারি প্রতিষ্ঠান ডেস্টিনির সাতক্ষীরা জেলায় প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালনকালে সাধারণ মানুষের কোটি টাকা প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আবু সাঈদ সিটি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের প্রাক্তন উপ পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান , শিক্ষা পরিদর্শক মোঃ হেমায়েত উদ্দীন এবং প্রাক্তন অডিট অফিসার মোঃ মোখলেছুর রহমান ২০১৭ সালের ২৫ মে সাতক্ষীরা সিটি কলেজটি পরিদর্শন ও নিরীক্ষা করেন। উক্ত দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর মোঃ জাহাঙ্গীর হোসন ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর দাখিলকৃত প্রতিবেদনের প্রথম কলামে দর্শন বিভাগের শিক্ষক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ২০১৫ সালের পহেলা নভেম্বর এমপিওভুক্ত হন। পরিদর্শন বিবরনী অনুসারে ডিগ্রী স্তরে ২০১৪২০১৫ শিক্ষাবর্ষে ৫ জন, ২০১৫ ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে ২ জন এবং ২০১৬২০১৭ শিক্ষা বর্ষে ভর্তি হয়েছে ৯জন । অর্থাৎ ৩ শিক্ষাবর্ষে দর্শন বিষয়ের ১ম বর্ষ, ২য় বর্ষ ও ৩য় বর্ষে কোন কাম্য শিক্ষার্থী নেই। ২০১০ সালের ৪ ফেব্রয়ারি জনবল কাঠামো অনুসারে প্রতি বর্ষের জন্য বিষয় ভিত্তিক কাম্য শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৫ জন। কাজই কাম্য শিক্ষার্থী না থাকায় তার এমপিও ভুক্তির সুযোগ ছিল না। মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের ২০১৫ সালের পহেলা নভেম্বর এমপিও ভুক্তির তারিখ থেকে পরিদর্শনের তারিখ ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত গৃহীত তিন লাখ ৭৭ হাজার ৬০ টাকা ফেরৎযোগ্য। কাম্য শিক্ষার্থী না থাকা অবস্থায় ভবিষ্যতেও তিনি এমপিও পাবেন না।

এমনকি ২০২১ সালের ১৫ জুন মাউশির খুলনা কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসর মোঃ হারুণি অর রশিদের নেতৃত্বাধীন তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, তৃতীয় শিক্ষক খলিলুর রহমানকে ৪র্থ শিক্ষক হিসেবে ও জাহাঙ্গীর আলমকে ৩য় শিক্ষক হিসেবে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত বিধি সম্মত নয় এবং তিনি প্যাটার্ন বর্হিভুত শিক্ষক হওয়ায় এমপিওভুক্তি অবৈধ। অধ্যক্ষ আবু সাঈদের বর্ণনা মতে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বর্তমানে কোন মামালা না থাকার কথা বলা হলেও দুটি মামলা চলমান রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। ফলে অধ্যক্ষ আবু সাঈদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার কথা উল্লেখ করা হয়।

সাতক্ষীরা সিটি কলেজের কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে এমপিওভুক্ত হওয়া জাহাঙ্গীর আলমসহ ১৫ জন শিক্ষককে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আ ..ম আল ফিরোজ গত বছরের ২৮ নভেম্বর আপিল শুনানিতে তলব করে সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হলেও আজো তা কার্যকর করা হয়নি।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতক্ষীরা সিটি কলেজের কয়েকজন শিক্ষক সাংবাদিকদের জানান, নিজেকে বাঁচাতে জাহাঙ্গীর আলম নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ ড. শিহাবউদ্দিনের সঙ্গে সখ্যতা রেখে নব্য আওয়ামী লীগার সেজে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলামের বাড়িতে যেয়ে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এমনকি সাবেক অধ্যক্ষ আবু সাঈদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে সাবেক সভাপতি মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি’র সঙ্গেও সুসম্পর্ক রেখেছিলেন। ফলে কয়রার প্রত্যন্ত অঞ্চলের নি¤œ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে জাহাঙ্গীর নিয়োগ ও এমপিও বাণিজ্যে ঘটক সেজে আজ তিন থেকে চার কোটি টাকার মালিক বলে প্রচার রয়েছে।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে শুক্রবার সন্ধ্যায় তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।

রও পড়ুন: লঞ্চে নাশকতার পরিকল্পনায় ছাত্রদলের ২ নেতা আটক

সাতক্ষীরা সিটি কলেজের নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ ড. শিহাবউদ্দিন সম্প্রতি এ প্রতিবেদককে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিনি কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মোকছেমুল হককে নিয়ে গত ২৬ নভেম্বর শিক্ষা সচিবের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ি জাহাঙ্গীর আলমের জালিয়াতির মাধ্যমে জাহাঙ্গীর আলমের নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত বিষয় ছাড়াও ২০ শিক্ষকের নিয়োগও এমপিওভুক্তির বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেনের নিকট থেকে পাওয়া কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। প্রয়োজনে আবার ডাকলে সেখানে যেতে হবে।

 

মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More