শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাবেক পৌর মেয়র ভিপি আনোয়ারের বক্তব্য নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধী প্রার্থী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বিদ্রুপ করে বক্তব্য দেয়ায় স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
গত বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) নালিতাবাড়ী উপজেলা বিএনপির একটি অংশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে। ওই অনুষ্ঠানে শেরপুর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য আনোয়ার হোসেন (ভিপি আনোয়ার) বলেন, “নকলা–নালিতাবাড়ীতে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী দুলাল চৌধুরীর পরিবার হচ্ছে একটি হিন্দু পরিবার। উনাকে মনোনয়ন দিলে জনগণ তাকে ভোট দিবে না। কারণ একটা সংখ্যালঘু মানুষকে জনগণ ভোট দিবে না।”
একই অনুষ্ঠানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ–সভাপতি ও শেরপুর জেলা বিএনপির সদস্য আবু সুফিয়ান সম্পর্কেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “তার রাজনীতি মাত্র শুরু হয়েছে, তার আরো সময় আছে তবুও আবু সুফিয়ানও মনোনয়ন চাচ্ছে। সুফিয়ানের পরিবার কিন্তু রাজনৈতিকভাবে ততটা গ্রহণযোগ্য পরিবার না।”
এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমর্থকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। দুলাল চৌধুরীর সমর্থকেরা ৫ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে ভিপি আনোয়ারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। পরদিন ৬ সেপ্টেম্বর নালিতাবাড়ী বাজারে তারা প্রতিবাদ মিছিলও করেন।
এ প্রসঙ্গে নালিতাবাড়ী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া মাকসিম বলেন, “দুলাল চৌধুরী ২০১২ সাল থেকে নকলা–নালিতাবাড়ী নেতা–কর্মীদের পাশে আছে। দলের দুঃসময়ে বহু নেতাদের তার অর্থে হাইকোর্ট থেকে জামিন করিয়েছে। দলে দুঃসমেয় তার অর্থে আমরা দলীয় প্রোগ্রাম করেছি। দুলাল চৌধুরীর অর্থে রাজনীতি করে নাই এমন নেতা খুঁজে পাওয়া কঠিন। একটি মহল দুলাল চৌধুরীকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য এমন কটুক্তিমূলক অপপ্রচার চালাচ্ছে, যা আমরা কখনোই মেনে নিবো না। ভিপি আনোয়ার এমন বক্তব্য দিয়ে হিন্দু–মুসলিমদের মাঝে ভেদাভেদ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।”
শেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমি বিষয়টি আপনার কাছে মাত্র জানলাম। এ ধরণের কোন কথা বলে থাকলে অবশ্যই আমরা শৃঙ্খলা বিরোধী কাজের জন্য জবাবদিহি চাইবো। আমি আগে ভিডিওটি দেখি তারপর আরো বিস্তারিত বলবো।”
শেরপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ বি এম মনুনুর রশিদ পলাশ বলেন, “ভিপি আনোয়ার এধরনের বক্তব্য রাখতে পারে না। হিন্দু মুসলিম ইস্যু বিএনপিতে তোলার সুযোগ নাই। আনোয়ার ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা ছেয়েছে, তারপরও আমরা তাকে শোকজ নোটিশ করবো। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।”
নিজের বক্তব্য সম্পর্কে ভিপি আনোয়ার বলেন, “আমি দলীয় মনোনয়নের গুরুত্ব বুঝাতে এমন কথা বলেছি। কাউকে ছোট করার জন্য বক্তব্য দেইনি। তারপরও সংখ্যালঘু শব্দটি আমার উচ্চারণ করা ঠিক হয়নি।”