শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪

নারী নির্যাতন মামলায় বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদ কারাগারে

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ পুলিশের পরিদর্শক আব্দুর রশিদ।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়দা জজ (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক উম্মে সরাবন তহুরা এ আদেশ দেন।

এর আগে উক্ত মামলায় উচ্চ আদালত থেকে ৮ সপ্তাহের জামিন শেষে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আজ আসামী পক্ষের আইনজীবী জামিনের আবেদন করলে নামঞ্জুর করেন আদালত।

গত ১৯ জুন আদালতে আত্মসমর্পনের শেষ দিন ছিলো। তবে এ দিন একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর মৃত্যুতে নারায়ণগঞ্জ আদালতের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকায় নির্ধারিত তারিখে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি।

জানা যায়, মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে মাকসুদ হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী সুলতানা বেগম ২৪ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইবুনাল আদালতে তাকে আসামি করে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে ২৪ এপ্রিল বন্দর থানায় যৌতুকের জন্য মারধরের ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন তার স্ত্রী সুলতানা বেগম।

২৫ এপ্রিল বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এবং বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত একটি ডিভিশন বেঞ্চ মাকসুদের আট সপ্তাহের আগাম জামিন মঞ্জুর করেন।

মামলার আবেদনে সুলতানা বেগম উল্লেখ করেন, প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে ১৯৯৮ সালের ০৭ জুলাই সুলতানা বেগমকে বিয়ে করেন মাকসুদ। বিয়ের সময় সুলতানার পরিবার মাকসুদের হাতে নগদ ৭ ভরি স্বর্ণালংকার তুলে দেয়। বিয়ের পরে সুলতানাকে নিয়ে একটি ভাড়া করা বাসায় উঠেন মাকসুদ। এর দুই বছরের মাথায় তাদের সংসারে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। যার নাম ইসরাত জাহান শ্রাবন্তী। একপর্যায়ে সুলতানা টের পান, মাকসুদ একাধিক নারীর সাথে পরকীয়াতে লিপ্ত। এসব নিয়ে মাকসুদকে প্রশ্ন করেন ও মাকসুদের পৈতৃক বাড়িতে তুলে নেওয়ার দাবি জানান সুলতানা কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে তুলে নেওয়ার শর্ত হিসেবে মাকসুদ সুলতানাকে তার পৈতৃক উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি বিক্রি করে সেই টাকা মাকসুদের হাতে তুলে দেওয়ার চাপ দিতে থাকেন।

সুলতানা আরো উল্লেখ করেন, একপর্যায়ে মাকসুদ স্ত্রী ও কন্যা সন্তানকে সুলতানার বাবার বাড়িতে ফেলে রেখে চলে যান ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। অনেক চেষ্টার পরে ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর মাকসুদকে তার কন্যার অসুস্থতার খবর পাঠিয়ে আসার অনুরোধ করলে তিনি শ্বশুরবাড়িতে এসে ফের সুলতানার উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি বিক্রির চাপ দেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে সুলতানা ওই মাসের ১৪ অক্টোবর যৌতুক নিরোধ আইনে মাকসুদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

কিন্তু এই মামলায় জামিনে কারামুক্ত হয়ে গত ২১ এপ্রিল মাকসুদ তার কয়েকজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে রাত ১১টার দিকে সুলতানার পৈতৃক বাড়িতে আসেন ও মামলা তুলে নিতে হুমকিধামকি দেন। সেই সাথে উত্তরাধিকার সূত্রে সুলতানার প্রাপ্ত সম্পতি বিক্রি করে সেই টাকা ব্যবসার জন্য মাকসুদকে তুলে দিতে বলেন। মাকসুদের কথামতো সুলতানা রাজি হলেই তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে বাড়িতে তুলে নেওয়া হবে বলেও প্রলোভন দেখান। কিন্তু এসব শর্তে সুলতানা রাজি না হওয়ায় মাকসুদ সুলতানাকে খুন করার উদ্দেশ্যে তেড়ে আসেন। সুলতানার পিতা বাধা দিলে তাকেও লাথি দেন মাকসুদ। মাকসুদসুলতানার কন্যা শ্রাবন্তী মাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও জখম করেন মাকসুদ। পরে সুলতানাকে বেদম মারধর করেন মাকসুদ। এই বিষয়ে আবার মামলা করলে ও যৌতুক না দিলে সুলতানাকে মেরে মাটিতে পুঁতে ফেলার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন মাকসুদ।

বৃহস্পতিবার মামলার শুনানীকালে বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা উক্ত মামলাটিকে নির্বাচনে হয়রানী করার জন্য উদ্দেশ্যমূলক ভাবে করা হয়েছে বলে দাবী করে মাকসুদ হোসেনের জনপ্রিয়তা বিবেচনায় নিয়ে জামিনের আবেদন করেন। পরিপ্রেক্ষিতে বাদী পক্ষে আইনজীবীদের যুক্তিতে আদালতের বিচারক মাকসুদ হোসেনকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

উল্লেখ্য মাকসুদ হোসেনের বিরুদ্ধে উক্ত মামলাটি ছাড়াও আরো ৪টি মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়াও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভর বিরুদ্ধে পুলিশ পেটানো, ইউপি সদস্যকে অপহরনের পর হত্যার চেষ্টা, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মোট ৩টি মামলা চলমান রয়েছে।

যার মধ্যে, মাকসুদ হোসেনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় স্ত্রীকে ভরন পোষন না দিয়ে নির্যাতন ও যৌতুক বিরোধ আইনের তিন ধারায় সিআর মামলা নং২৭৭/২০২২, পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৮৫ সালের () ধারা বিধান মতে দেন মোহর ও খোরপোশ আদায়ের মোকাদ্দমা নং০৩/২০২৩, পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১৯৯৫ এর ১২, ১৫() টেবিল, ক্রমিক নং ১২ এবং ২০১৩ এর ৫(), ১৫() () এবং ৮(), ১৮() ধারায় সিআর মামলা নং ৪/২৩।

মাকসুদ হোসেনের ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভ বিরুদ্ধে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় মামলা নং ২৬(১২)২২। ধামগড় ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার সফরউদ্দিনকে হত্যা উদ্দেশ্যে তুলে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় বন্দর থানায় মামলা নং২৩()২২। বালুমহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ১৫() ধারায় মামলা নং০৩/২০২৩।

গৌতম / আল / দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More