বাংলা চলচ্চিত্র জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র নায়করাজ রাজ্জাকের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৭ সালের আজকের এই দিনে (২১ আগস্ট) না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। মৃত্যুবার্ষিকীতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাজ্জাকের ছোট ছেলে চিত্রনায়ক খালিদ হোসেন সম্রাট জানান, উত্তরার রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স মসজিদে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাসাতেও।
তিনি বলেন, আব্বার মৃত্যুবার্ষিকীতে আমি ফজরের নামাজ পড়ে কবরের কাছে যাই। আব্বার জন্য দোয়া করি। রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সে আব্বার নিজের হাতে গড়া একটি মসজিদ আছে। সেখানে আব্বা নিজে ইমাম নিযুক্ত করে গিয়েছিলেন। বাদ আছর মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। একই সময়ে বাসাতেও মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। দুপুরে আগত মেহমানদের এবং গরীব এতিমদের আম্মা নিজ হাতে খাওয়াবেন। মূলকথা হচ্ছে, আব্বার জন্য দোয়া করা। আব্বার জন্য সবাই দোয়া করবেন।
১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি ভারতের কলকাতার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রাজ্জাক। তার পুরো নাম আব্দুর রাজ্জাক। কলকাতার থিয়েটারে অভিনয় করার মাধ্যমে অভিনয় জীবনের শুরু। সিনেমার নায়ক হওয়ার অদম্য স্বপ্ন ও ইচ্ছা নিয়ে রাজ্জাক ১৯৫৯ সালে ভারতের মুম্বাইয়ের ফিল্মালয়তে সিনেমার ওপর পড়াশুনা ও ডিপ্লোমা গ্রহণ করেন। এরপর কলকাতায় ফিরে এসে শিলালিপি ও আরও একটি সিনেমায় অভিনয় করেন। তবে ১৯৬৪ সালে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কবলে পড়ে রাজ্জাক তার পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকায় চলে আসতে বাধ্য হন।
তৎকালীন প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকায় এসেও রাজ্জাক চলচ্চিত্রের নায়ক হওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। তবে প্রথমেই এতে সফলতা না পেয়ে সিনেমার একজন সহকারি পরিচালক হিসেবে ‘উজালা’ সিনেমাতে পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারি হিসেবে কাজ শুরু করেন। ’
৬০–এর দশকের শেষ থেকে ’৭০ ও ’৮০–এর দশকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ওঠেন রাজ্জাক, অভিনয় করেন ৩ শ’–এরও বেশি চলচ্চিত্রে। রাজ্জাক অভিনীত জননন্দিত সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘নীল আকাশের নীচে, ময়নামতি, মধু মিলন, পীচ ঢালা পথ, যে আগুনে পুড়ি, জীবন থেকে নেয়া, কী যে করি, অবুঝ মন, রংবাজ, বেঈমান, আলোর মিছিল, অশিক্ষিত, অনন্ত প্রেম, বাদী থেকে বেগম ইত্যাদি।
দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য অভিনয় জীবনে রাজ্জাক–সুচন্দা, রাজ্জাক–কবরী ও রাজ্জাক–শাবানা ও রাজ্জাক–ববিতার অনেক সিনেমা দর্শক হৃদয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং যা রাজ্জাককে ঢালিউডের নায়ক রাজ উপাধিতে ভূষিত করেছে। কাজের স্বকৃতি স্বরূপ তিনি পেয়েছেন একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার।
ব্যক্তিগত জীবনে রাজলক্ষীর সঙ্গে সুখের দাম্পত্যে রাজ্জাক ছিলেন তিন পুত্র ও দুই কন্যার জনক। তার দুই পুত্র বাপ্পারাজ ও সম্রাটও বাবার মতোই নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। শেষ জীবনে নানা অসুখে আক্রান্ত ছিলেন নায়করাজ। মৃত্যুর পর তাকে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
শায়লা/ দীপ্ত নিউজ