অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার)। বুধবার (৫ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাকে শপথবাক্য পাঠ করান।
চৌধুরী রফিকুল আবরার দেশের একজন প্রখ্যাত মানবাধিকার কর্মী, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক এবং শরণার্থী ও অভিবাসী আন্দোলন গবেষণা ইউনিটের নির্বাহী পরিচালক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’–এর সভাপতি।
আবরার মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন এবং ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করার পর তিনি যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে এমএ এবং অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার এই উচ্চশিক্ষা তাকে মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জগতে একটি উজ্জ্বল অবস্থানে পৌঁছে দেয়।
১৯৯৫ সালে আবরার তার সহযোগীদের সঙ্গে শরণার্থী ও অভিবাসী আন্দোলন গবেষণা ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে মানবাধিকার এবং অভিবাসন বিষয়ক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আবরার ‘এইড, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি‘ বইটি লেখেন ১৯৯৯ সালে এবং শাহদীন মালিকের সঙ্গে ‘দক্ষিণ এশিয়ার জাতীয় শরণার্থী আইনের দিকে‘ বইটি সহ–সম্পাদনা করেন।
তিনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং শরণার্থী সমস্যা নিয়ে বহু সংবাদপত্র ও জার্নালে নিবন্ধ লিখেছেন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের অধিকার, রোহিঙ্গা সংকট, এবং নিপীড়নমূলক ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনসহ বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন।
আবরার দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার কর্মী হিসেবে কাজ করছেন এবং বাংলাদেশের মানুষের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংকট নিয়ে চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সমালোচনা করেছেন, পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বকে উচ্চারণ করেছেন। ২০২৩ সালে তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান, যা তার মানবাধিকার আদর্শের প্রতি তাঁর দৃঢ় অবস্থানকেই প্রমাণ করে।
আবরার প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং গণমাধ্যমের আগ্রাসী ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেছেন। এছাড়া, বাংলাদেশে গুম ও নিপীড়নের বিষয়েও তিনি আপসহীন অবস্থান গ্রহণ করেছেন।
তার অভিজ্ঞতা, জ্ঞানের গভীরতা এবং মানবাধিকার বিষয়ে তার অব্যাহত উদ্যোগ শিক্ষা ও সমাজের জন্য একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।