২০
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় কেয়া-আরহাম নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেছে। এই ফাউন্ডেশন থেকে গরু-ছাগল, হাস, মুরগি প্রদান এবং বিভিন্ন ভাবে ঋণ দেওয়ার নামে গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ৮জন ভুক্তভোগী নারী একযোগে ওই ফাউন্ডেশন ও শাখা ব্যবস্থাপক সুমির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এরপর থেকে একের পর এক সাধারণ মানুষের সঙ্গে করা প্রতারণার নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদরের রেলগেট এলাকায় ২০২৩সালে কেয়া-আরহাম ফাউন্ডেশনের শাখা অফিস খোলা হয়। ওই ফাউন্ডেশনের রাণীনগর শাখার ব্যবস্থাপক হিসাবে দায়িত্ব পান দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের আব্দুল জলিল প্রিন্সিপালের মেয়ে শাম্মি আক্তার সুমি। ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে লোভনীয় নানা প্রলোভন দেখিয়ে বেশকিছু কেন্দ্র খোলা হয়। এরপর থেকে শুরু হয় উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ওই ফাউন্ডেশনের নামে ব্যবস্থাপক সুমির নানা প্রতারণা। অভিযোগে বলা হয়, চলতি বছরে সুমি উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামে যান। সেখানে লিপিকে কেন্দ্র প্রধান করে একটি কেন্দ্র খোলা হয়। ওই কেন্দ্রে সদস্য হন ১৫জন। ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক সুমি ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে ১৫জন সদস্যকে গরু-ছাগল দেওয়ার কথা বলে ৬শ’ টাকা করে হাতিয়ে নেয়। এরপর ১৫ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে দিন পার করতে থাকেন। একপর্যায়ে ১৫ জনের মধ্যে মাত্র ৫জনকে ১০টি করে ছোট ছোট মুরগির বাচ্চা দেন। আর বাকি ১০জনকে তিনি কিছুই দেননি এবং টাকাও ফেরত দেয়নি। এরইমধ্যে রাণীনগর সদরের পার্শ্ববর্তী ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে কর্মী নিয়ে গিয়ে সুমি সেখানেও কেন্দ্র তৈরি করেন। ওই কেন্দ্রে বিদেশ গমনকারীদের ২থেকে ৩লাখ টাকা ঋণ প্রদানসহ বিভিন্নভাবে ঋণ দেওয়ার নামে ওই গ্রামের সফুরা, নাছিমা, পাখি ও সেফালীসহ ৯জনের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়। পরবর্তিতে ফাউন্ডেশন থেকে তাদের ঋণ দেওয়াতো দুরের কথা তাদের কাছ থেকে নেওয়া টাকাগুলোও ফেরত দেওয়া হয়নি। অভিযোগে আরও জানা যায়, উপজেলার নয়াহরিশপুর গ্রামের বেশকিছু সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রলোভনে প্রায় লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় শাখা ব্যবস্থাপক। এরপর দীর্ঘদিনেও তাদের ঋণ এবং টাকা ফেরত না দেওয়ায় বাধ্য হয়ে ২আগষ্ট টাকা উদ্ধারে ফাউন্ডেশনের রাণীনগর শাখায় অবস্থায় নেয় সেখানকার মানুষ। পরে চাপের মুখে পড়ে তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে স্ট্যাম্পকরে দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামের লিপি বিবি জানান, ওই ফাউন্ডেশনের রাণীনগর শাখা ব্যবস্থাপক সুমি আমাদের গ্রামের ১৫জনকে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এসবের প্রতিকার চেয়ে আমরা ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সিম্বা গ্রামের ফজলু ও তার স্ত্রী জানায়, আমাদের ঋণ দিতে চেয়ে ফাউন্ডেশনের সুমি ৪ হাজার টাকা নিয়েছে, কিন্তু আজও ঋণ দেননি। এছাড়া আমার ছেলেকে আনসার বাহিনীতে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভনে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আরেক ভুক্তভোগী আরজিনা জানান, আমিসহ দুইজনকে এক লাখ টাকা করে ঋণ দিতে চেয়ে আমাদের দুইজনের কাছ থেকে ১০ হাজার করে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সুমি। এছাড়া আমাদের এলাকার একজনকে ৫ লাখ টাকা ঋণ দিতে চেয়ে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। আমার দেবরকে লোন দিবে বলে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। বেশ কিছুদিন হলে গেলেও ঋণ না দিয়ে ঘুড়াচ্ছেন। বড়বড়িয়া গ্রামের ভুক্তভোগী শামীম জানান, আমি অসুস্থ ব্যক্তি। আমাকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা করানোর জন্য এবং আর্থিক অনুদান পাইয়ে দেওয়ার জন্য ফাউন্ডেশনের সুমি আমার কাছ থেকে ২ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন চিকিৎসা করায়নি। এছাড়া দুইবার ৫শ’ টাকা করে আমাকে ১ হাজার টাকা দিয়েছে। আর বাকি অনুদানের টাকা ফাউন্ডেশনের সুমি খেয়ে ফেলেছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত কেয়া-আরহাম ফাউন্ডেশনের রাণীনগর শাখা ব্যবস্থাপক শাম্মি আক্তার সুমি বলেন, কেয়া-আরহাম ফাউন্ডেশনটি রাণীনগরে আমার নিজ দায়িত্বে পরিচালনা করে আসছি। বর্তমানে আর্থিক ঋণের ক্ষেত্রে চেক ও স্ট্যাম্পের কোন আইনগত মূল্যনেই। তাই ফাউন্ডেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ঋণের পরিমানের বিপরীতে জামানত নিয়েছি। যাচাই বাছাই করে ঋণ দেওয়ার মতো হলে দিবো। আর যে সকল অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে সব মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি। কেয়া-আরহাম ফাউন্ডেশনের নওগাঁর সাধারণ সম্পাদক তোতা বলেন, ফাউন্ডেশনটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। আমরা সুমির বিরুদ্ধে কিছু কিছু অভিযোগ শুনেছি। আর আপনারা যে অভিযোগের বিষয়ে বলছেন সেসব ঋণ এবং অগ্রিম অর্থ আদায়ের কার্যক্রম এই ফাউন্ডেশন এখনো হাতে নেয়নি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হুসেইন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ