ফেনীতে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এতে ঋতু পরিবর্তনের সাথে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। গত ৩/৪ দিনে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার ৫ গুণ অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
এ ব্যাপারে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল জানান, শিশু ওয়ার্ডে ২৬ শয্যার বিপরীতে ভর্তি ছিল ১৩৫ জন। রোগীর তুলনায় শিশু চিকিৎসক অপ্রতুল। মাত্র ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে এত রোগীর চাপ সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে। এর মধ্যে হাসপাতালের স্ক্যানু বিভাগও চালু রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে। তবে শিশু রোগীদের নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শিশু চিকিৎসকের সংকট মেটানোর কথা বললেও কোন সুফল পাচ্ছি না।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) হাসপাতালের শিশু বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডের ভেতর জায়গা না হওয়ায় অতিরিক্ত শিশু রোগীদের নিয়ে হাসপাতালের বারান্দার মেঝে ঠাঁই নিয়েছেন অভিভাবকরা। ওয়ার্ডের ভেতর রাউন্ডে থাকা ডাক্তারের সেবা নিতে রোগীর স্বজনরা শিশুদের কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
রোগীর স্বজনরা বলছেন, হাসপাতালে বারান্দায় কোনরকম বিছানা পেতে থাকলেও সুচিকিৎসা পাচ্ছি না।
শামীমা নামে এক শিশু রোগীর অভিভাবক বলেন, ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসে ফ্লোরে থাকতে হচ্ছে শিশু রোগীদের। ফলে সুস্থ হওয়ার বদলে আরও বেশি সংক্রমিত হচ্ছে শিশুরা।
আরেক রোগীর স্বজন অভিযোগ করে বলেন, সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই এটা কোন ভাবেই মানা যায় না। আমি আমার সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে আজ ৪ দিন। ওয়ার্ডের ভেতর এতো রোগী ডাক্তার আসেন ১ বা ২ জন। ডাক্তাররা রোগীর সমস্যা ভালোভাবে বুঝতে পারেন না।
আরেক রোগীর মা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ওয়ার্ডে ৩/৪ জন নার্স ডিউটি করেন, রোগীর চাপ বাড়লে তাদের সাথে কথাই বলা যায় না । প্রায়ই তারা রোগীর স্বজনদের সাথে অশোভন আচরণ করেন।
হাসপাতালের শিশু বিভাগে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স শ্যামলী রাণী বলেন, গত কদিন ধরে রোগীর চাপ বেড়েছে কয়েকগুন। এত রোগীর চাপ সামাল দেয়া আমাদের পক্ষে কষ্টকর। কাঙ্খিত সেবা দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।
আরএমও জানান, শিশুদের বেশিরভাগই নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, জ্বর সর্দি সহ নানা রোগে আক্রান্ত। এখন আবার নতুন করে হ্যান্ড ফুড এন্ড মাউথ নামে নতুন আরেকটি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
হাসপাতালে রোগীদের শতভাগ সেবা নিশ্চিতে চিকিৎসক সংকট নিরসনের দাবি জানিয়েছেন ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আসিফ ইকবাল। তিনি বলেন, ২৫০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনা করার মতো পর্যাপ্ত চিকিৎসক এখানে নেই। চিকিৎসক সংকটের কারণে প্রায়ই সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতিদিন বহি:বিভাগ ও ওয়ার্ডে যে পরিমাণ শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে সে তুলনায় আমাদের চিকিৎসক নেই। ফলে মাত্র ৩ জন চিকিৎসককে অধিক চাপ সামলে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
আসিফ ইকবাল আরও বলেন, ওয়ার্ডে শয্যা আছে ২৬টি রোগী ভর্তি থাকে একশোর বেশি। হাসপাতালে রোগী আসলে ফিরিয়ে দেওয়ার যেহেতু সুযোগ নেই, তারপরও আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু যদি সংশ্লিষ্ট রোগের চিকিৎসক না থাকে তাহলে সেবা দেওয়াটা কষ্টসাধ্য। অপর্যাপ্ত চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতাল চালাচ্ছি আমরা। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার জানানো হলেও কোন সুফল মিলছে না।
মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ