টাঙ্গাইলে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করা কিশোরীর জন্ম দেওয়া শিশুটির পিতা টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনির নয়। শিশুটির ডি এন এ পরীক্ষার প্রতিবেদনে এ তথ্য এসেছে।
প্রতিবেদনটি উপস্থাপনের পর সোমবার (৯ অক্টোবর) শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ গোলাম কিবরিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। এর ফলে হাইকোর্টের দেয়া বড়মনির জামিন আবেদন বহাল রইলো।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
গোলাম কিবরিয়া টাঙ্গাইল–২ (গোপালপুর–ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বড় ভাই। বড়মনি জেলা বাস–মিনিবাস মালিক সমিতিরও মহাসচিব।
গোলাম কিবরিয়ার আইনজীবী একেএম গোলাম সারোয়ার ও তারেক মো. বিন আসাদ জানান, সোমবার ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন জমা দেয়ার দিন ধায্য ছিলো। সে অনুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপিল বিভাগে ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল জমা দেয়া হয়। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়, কিশোরীর জন্ম দেওয়া শিশুটির জৈবিক পিতা গোলাম কিবরিয়া নন। পরে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। এর ফলে গোলাম কিবরিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রইল। এখন তাঁর কারামুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা নেই।
মামলাটিতে গত ১১ জুলাই হাইকোর্ট রুল দিয়ে গোলাম কিবরিয়াকে ছয় মাসের অন্তর্র্বতীকালীন জামিন দেন। এই জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করেছিল। আবেদনটি গত ১২ জুলাই আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত গোলাম কিবরিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেন এবং ধর্ষণের মামলা করা কিশোরীর জন্ম দেওয়া শিশুর ডিএনএ পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ২১ আগস্ট আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন আপিল বিভাগ ডিএনএ পরীক্ষাসংক্রান্ত ১২ জুলাই চেম্বার বিচারপতির দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনটি ৯ অক্টোবর শুনানির জন্য তারিখ রাখেন।
এক কিশোরী বাদী হয়ে গত ৫ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করে। গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী নিগার আফতাবকেও মামলায় আসামি করা হয়।
এ ব্যাপারে বড়মনির ভাই ও টাঙ্গাইল–২ (গোপালপুর–ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির বলেন, আমাদের পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এমন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন একটি নারীকে নিয়ে ধর্ষণের নাটক সাজানো হয়। আজকে ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে ফলাফলের মাধ্যমে সব প্রমাণ হয়ে গেলো। আমার নির্বাচনী আসনের প্রতিপক্ষরা খান পরিবারের সাথে হাত মিলিয়ে এমন মিথ্যা ঘটনা সাজান। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। আইন আমাদের যথাযথ মূল্যায়ন করেছে। যারা এমন ঘটনা সাজিয়েছে আমি তাদের বিচারের দাবি করছি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৫ এপ্রিল টাঙ্গাইল সদর থানায় ওই নারী মামলায় অভিযোগ করেন, গোলাম কিবরিয়া গত বছর ১৭ ডিসেম্বর তাকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এতে তিনি অন্তঃসত্তা হয়ে পড়েন। পরে গত ২৯ মার্চ তার গোলাম কিবরিয়ার শ্বশুড়বাড়িতে ডেকে নিয়ে তাকে মারপিট করা হয় এবং বড় মনি তাকে আবার ধর্ষণ করেন। মামলায় বড় মনি’র স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামী করা হয়। পরে ওই কিশোরী আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেয়। ওই সময় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ওই কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়। সেই ডাক্তারি পরীক্ষায় ওই কিশোরী ৬ মাসের অন্তঃসত্তার প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্ত তখন মামলার এজাহারে প্রায় সাড়ে ৩ মাস উল্লেখ করা হয়েছিলো।
মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ