পাবনার বেড়া উপজেলার সরকারি একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় এক গৃহবধুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তকে নাকেখত, জুতাপেটা ও মাত্র এক হাজার টাকার জরিমানা করে মিমাংসার করার উভিযোগ উঠেছে স্থানীয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সম্প্রতি উপজেলার চাকলা ইউনিয়নের ঈদগাহ মাঠে অবস্থিত চাকলা আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় সংঘঠিত এঘটনায় আলোচনা–সমালোচনা ঝড় উঠেছে। এর আগে গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার দুপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম শফিক প্রকল্পের আরেক বাসিন্দা সালেহা খাতুনের (ছদ্মনাম) ঘরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এসময় তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন টের পেলে অভিযুক্ত পালিয়ে যান।
এঘটনার পরেরদিন বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) চাকলা ইউনিয়ন পরিষদে সালিশী বৈঠক হয়। সেখানে চাকলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সরদারের নেতৃত্বে অভিযুক্তকে নাকেখত, জুতাপেটার পাশাপাশি এক হাজার টাকায় ঘটনা মিমাংসা করা হয়। এসময় ভুক্তভোগীদের পরবর্তীতে কোনো মামলা বা ঝামেলা না করতেও হুমকি দেন চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে এলাকায় আলোচনা–সমালোচনার ঝড় উঠলে শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে অভিযুক্ত শফিককে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে আলোচিত ধর্ষণ মামলায় ১০ জনের ফাঁসি
ভুক্তভোগীর স্বামী আবদুল রাজ্জাক বলেন, ‘মাত্র এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আমার স্ত্রীর ইজ্জতের মুল্য কি এক হাজার টাকা? সেখানে আমাকে অনেক ভয় দেখানো হয়েছে। চেয়ারম্যান বলেছে– ‘তু্ই যদি মামলা–মোকাদ্দমায় যাস তাহলে আমি বলে দেব তুই তোর স্ত্রীকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করাস’, এজন্য আমি প্রথমে পুলিশের কাছে যায়নি। আমি আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ ও তামাসার বিচারের বিচার চাই।’
অভিযোগ অস্বীকার করে চাকলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সরদার বলেন, ‘আমার কাছে উভয় পক্ষ আসলে আমি স্থানীয় মেম্বরদের সহযোগিতায় একটি সালিশী বৈঠক করেছি। সেখানে ধর্ষণের কোনো অভিযোগ ছিল না। তারপরও যেহেতু একজন নারীর ঘরে বিনা অনুমতিতে ঢুকেছিল এজন্য আমার তাকে (অভিযুক্ত) কানধরে উঠবোস করানো হয়েছে। কিন্তু কোনো জরিমানা করা হয়নি। যে ১ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে সেটা জরিমানা নয়, ওটা গ্রাম্যপুলিশদের খরচ হিসেবে দেয়া হয়েছে। তখন উভয় পক্ষ আমাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিল। এখন তারা মানছে না।’
তিনি বলেন, ‘একটি কুচক্রি মহল ও আমার প্রতিপক্ষের লোকজন আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ছড়াচ্ছে। যেহেতু তারা সিদ্ধান্ত না মেনে আইনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন আইনের মাধ্যমে যা হয় তা হবে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
এবিষয়ে বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর গত শনিবার রাতে আমরা অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম শফিককে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আমরা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শামসুল / আল / দীপ্ত সংবাদ