অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘ধর্মীয় উগ্রবাদীদের অপতৎপরতা ও চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে উগ্রবাদী জনগোষ্ঠী এবং পরাজিত ফ্যাসিবাদী অপশক্তি দেশে পুনরায় গণতন্ত্রের কবর রচনা করবে।’
বুধবার (১৯ মার্চ) ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে বিএনপি রাজনীতিবিদদের সম্মানে এই ইফতার মাহফিলে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় উগ্রবাদীদের অপতৎপরতা রুখতে না পারলে গণতান্ত্রিক বিশ্বের ইমেজ সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ। তাই দেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চরিত্র সম্মুন্নত রাখতে চরম পন্থা ও ধর্মীয় উগ্রবাদীদের অপতৎপরতা প্রতিহত করতে হবে। পাশাপাশি গণহত্যাকারী পলাতক মাফিয়া চক্রকে যেকোনো মূল্যে বিচারের সম্মুখীন করার মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক বিধি–ব্যবস্থা শক্তিশালী করাই হবে বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক পক্ষের শক্তির আগামী দিনের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।’
তিনি বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রে একটি সরকারের মেয়াদ নির্দিষ্ট। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক নীতি কিংবা রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা দীর্ঘস্থায়ী। সুতরাং রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী এবং টেকসই কার্যকর রাখতে জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায় নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে ক্ষমতাহীন জনগণ এবার নিজেদের ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে প্রস্তুত।
তারেক রহমান বলেন, জননিরাপত্তা নিশ্চিত এবং জনদুর্ভোগ কমানোর সকল পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জনগণের ভোট জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনকেই সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেবে এটাই গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রত্যাশা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলো সর্বস্তরের নেতা–কর্মী–সমর্থকদের প্রতি আহ্বান, গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আহ্বান বীর জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাজারো শহীদের রক্তে রঞ্জিত রাজপথে গড়ে উঠা ঐক্য বিরোধী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে এখনো। আমরা যদি সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকি স্বাধীনতা প্রিয় জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না ইনশাল্লাহ।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এবং ফ্যাসিস্ট সরকার পতন আন্দোলনে সকল শহীদ ও আহতদের জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সরকারকে সর্তক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী তাদেকে নিরাপত্তাহীন রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। সরকার, প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি কিংবা অন্য কোনো কাজে বেশি মনোযোগী থাকার কারণে আমাদের মা–বোন–কন্যাদের নিরাপত্তা সংকটে পড়েছে কিনা এই বিষয়টি গভীরভাবে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যমত কমিশন হয়েছে। সংস্কার প্রস্তাবগুলো রাজনৈতিক দলের কাছে পৌঁছে গেছে। আপনারা নিশ্চয় তা গভীরভাবে পর্যালোচনা করবেন, দেখবেন, পরীক্ষা করবেন। এই দেশে জাতির জন্য যেটা প্রয়োজন বাংলাদেশের মানুষের জাতীয় ইতিহাস, তার কৃষ্টি, তার ঐতিহ্য, তার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সব কিছুকে নিয়ে যেন আমরা সামনের দিকে এগোতে পারি। এটাই হওয়া উচিত আমাদের সকলের লক্ষ্য।’
এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমেদ বলেন, ‘আমাদের একটা জিনিস অনুধাবন করতে হবে যে, দেশটা আমাদের। ভারতের দালালী করে কোনো লাভ হবে না। আমরা বহুদিন দালালী করেছি বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সুতারাং আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যদি আমরা আগাই আমরা আর কখনো স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারবো না।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আমি মনে করি, বাংলাদেশের ভবিষ্যত বিনির্মাণে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের জন্য এখন জাতীয় ঐক্যই হবে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এই লক্ষ্য রেখেই যার যার জায়গা থেকে আমাদেরকে চারটি বিষয়ে এক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, এই চারটি বিষয় হলো– বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব; এতে কোনো আপোষ নাই। দুই. একটি টেকসই গণতন্ত্র, তিন. একটি ফেয়ার ইলেকশন এবং চার দুনীতিমুক্ত বাংলাদেশ। এভাবে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থেকে সমাজ তৈরি করতে পারি ইনশাল্লাহ কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না, আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি এদেশে পতিত স্বৈরাচার, পতিত লুটেরা এদেশে আর কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে না, সাহস পাবে না।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘একটি কথা বলা হচ্ছে যে, ইনক্লুসিভ ইলেকশন। আমি মনে করি যে, এই ইনক্লুসিভ ইলেকশন হওয়ার মতো বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার মতো রাজনৈতিক দল বর্তমানে দেশে রয়েছে।’
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ যে শক্তিকে পরাজিত করেছে, মুজিববাদ ও আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টদের বিদায় করেছে, বাংলাদেশের সামনের ভবিষ্যত রাজনীতি নির্বাচন, সেখানে সেই মুজিববাদী রাজনীতির স্থান আসলে হবে না। একটা বিচার প্রক্রিয়া চলমান আছে, বিচারের আগে তো সেই প্রশ্নটিই আসে না। আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে সেই আহ্বান রাখবে যে, এই বিষয়েও যাতে আমরা রাজনৈতিক ঐক্যমতে আসতে পারি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এখনো ফ্যাসিবাদী শক্তি তার দোসর সমাজের নানা জায়গায় রয়ে গেছে। আমাদের ফ্যাসিবাদী এই সিস্টেম বদলাতে হবে। আগামী বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য আমাদের মধ্যে কমিটমেন্ট প্রয়োজন। আমরা মনে করি যে, এখন যে পরিবেশ রয়েছে আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য অটুট রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা সামনে স্বাধীন বৈষ্যমহীন বাংলাদেশ হবে। সেজন্য জাতীয় ঐক্যকে ধরে রেখে এগুতে হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি নতুন রাজনৈতিক দল, গণঅভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা তরুণরাই এই দল পরিচালনা করছে। আমরা মনে করি, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে লড়াই হয়েছে সেই লড়াইয়ের স্প্রিরিটটা আমরা ধারণ করব।
প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় এই আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বক্তব্য রাখেন।
ইফতারে সিপিবির মোহাম্মদ শাহ আলম, রুহিন হোসেন প্রিন্স, খেলাফত মজলিশের আমির আল্লামা মামুনুল হক, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বহ্নিশিখা জামালী, বাংলাদেশ জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া, নাজমুল হক প্রধান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, গণ দলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মওলা চৌধুরী, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্যজোটের আব্দুর রকিব, বিকল্পধারা বাংলাদেশ নুরুল আমিন ব্যাপারী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, জাগপার খন্দকার লুৎফুর রহমান, রাশেদ প্রধান, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এসসিপি) সারজিস আলমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দীন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মীর নাসির, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, আবদুস সালাম পিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, আফরোজা খান রীতা, জহির উদ্দিন স্বপন, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, হাবিবুর রহমান হাবিবসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ইএ/দীপ্ত সংবাদ