দ্বিতীয় দফায় স্থাপত্যের সম্মানজনক স্বীকৃতি ‘আগা খান‘ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশ খ্যাতিমান স্থপতি মেরিনা তাবাশ্যুম। তাঁর নকশা করা ‘খুদি বাড়ি’ প্রকল্প আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার–২০২৫–এর জন্য মনোনীত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) কিরগিজস্তান রাজধানী বিশকেকে এই পুরস্কারের জন্য মেরিনা তাবাশ্যুমসহ ৭ বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়।
বিশ্বব্যাপী স্থাপত্যের অন্যতম বৃহৎ এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়ায় মেরিনা তাবাশ্যুম‘কে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অভিনন্দন বার্তায় তিনি বলেন, এই বিরল ও ঐতিহাসিক অর্জন বাংলাদেশের জন্য গৌরবময় সাফল্য।
প্রধান উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, নদীভাঙনে বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য নির্মিত জলবায়ু–সহনশীল, সাশ্রয়ী ও বহনযোগ্য গৃহনকশা ‘খুদি বাড়ি‘ প্রকল্প মানবিকতা ও দূরদর্শিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এর মাধ্যমে বিশ্বকে দেখানো হয়েছে যে স্থাপত্য কেবল নান্দনিকতায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং মর্যাদা, স্থিতিশীলতা ও মানবমেধার সৃজনশীল শক্তির প্রতিফলন।
মেরিনা তাবাশ্যুম বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর–এর পরিচালনা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’–এর প্রধান পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মেরিনা তাবাশ্যুম প্রথম বাংলাদেশি স্থপতি, যিনি দ্বিতীয়বার ‘আগা খান‘ পুরস্কার জিতেছেন।
‘আগা খান‘ স্থাপত্য পুরস্কার ২০২৫–এর ঘোষণায় বলা হয়েছে, বিচারকমণ্ডলী ‘খুদি বাড়ি‘ প্রকল্পের গভীর পরিবেশগত দৃষ্টিভঙ্গিকে বিবেচনায় নিয়েছেন। একই সঙ্গে বাঁশকে বৈশ্বিক অগ্রগতিতে অবদান রাখতে পারার একটি উপাদান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
১৫ সেপ্টেম্বর কিরগিজস্তান রাজধানী বিশকেকে এক অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। এই পুরস্কারের মোট অর্থমূল্য ১০ লাখ ডলার।
মেরিনা তাবাশ্যুম এর আগে ২০১৬ সালে ঢাকার দক্ষিণখানে বাইতুর–রউফ মসজিদের নকশার জন্য আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার জিতেছিলেন। সুলতানি আমলের স্থাপত্যের আদলে নকশা করা এ মসজিদ ২০১২ সালে নির্মিত হয়।
২০২১ সালে মানবিক ঘর তৈরির জন্য যুক্তরাজ্যের মর্যাদাপূর্ণ সন পদক পান মেরিনা তাবাশ্যুম। ২০২০ সালে ব্রিটিশ সাময়িকী প্রসপেক্ট–এর ৫০ চিন্তাবিদের মধ্যে শীর্ষ ১০ জনে স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি।
২০২৪ সালে খ্যাতনামা মার্কিন সাময়িকী টাইম–এর করা বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় মেরিনা তাবাশ্যুমকে স্থান দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, প্রয়াত প্রিন্স করিম আগা খান চতুর্থ ১৯৭৭ সালে আগা খান পুরস্কার প্রবর্তন করেন। এ পুরস্কারের মাধ্যমে এমন নির্মাণশৈলী চিহ্নিত করে উৎসাহ দেওয়া হয়, যাতে মুসলিম অধ্যুষিত জনগোষ্ঠীর আশা–আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে। এ পুরস্কারের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় একটি স্থাপনা মানুষের আর্থসামাজিক চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সাংস্কৃতিক জীবনে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখে, তা–ও গুরুত্বসহকারে দেখা হয়।
এসএ