বুধবার, নভেম্বর ১৩, ২০২৪
বুধবার, নভেম্বর ১৩, ২০২৪

‘দেশের ৪১ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পায় না’

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশের ৪১ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পায় না। আর বিশ্বের ২৬ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি সংকটে ভুগছে।

শুক্রবার (২২ মার্চ) বিকালে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে “শান্তি, প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় পানি : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ” শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলন (বানিপা) আলোচনা সভাটি আয়োজন করে।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সভার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বানিপার সাধারণ সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ।

আলোচনায় অংশ নেন পবার কার্যকরী সভাপতি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী, বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলনের সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও নাসফের সাধারণ সম্পাদক ও পবার সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী।

এছাড়া ছায়াতল বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠাতা সোহেল রানা, পরিবেশ কর্মী সৈয়দা অনন্যা রহমান, আবু মোকারাম সর্দার, বিশিষ্ট গাইনোকোলজিস্ট প্রফেসর ডা. বিলকিছ বেগম চৌধুরী সভায় বক্তব্য তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মীদের পাশাপাশি পবার ও গ্রীন ফোর্সের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে বানিপা’র সাধারণ সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ বলেন, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষা এবং খাবার পানি সরবরাহ, নৌ চলাচল, কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। এদেশে রয়েছে ছোট-বড় ৪০৫টি নদী। যার মধ্যে আন্তঃসীমান্ত নদীর সংখ্যা ৫৭টি। ৫৪টি ভারতের এবং ৩টি মিয়ানমারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। দেশের নদীগুলোর ৪৮টি সীমান্ত নদী, ১৫৭টি বারোমাসি নদী, ২৪৮টি মৌসুমী নদী। মানুষের অত্যাচারে নদীগুলো আজ মৃতপ্রায়। দখল, ভরাট, আর বর্জ্যে নদীগুলো এখন নিস্তব্ধ স্রোতহীন এবং দূষণের ভারে পানি ব্যবহারের অযোগ্য এবং জীববৈচিত্র শূণ্য হয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, দেশের নদীগুলোর প্রায় প্রতিটিরই একই দশা। তিস্তার পানি প্রবাহ ব্যাপকহারে কমে গেছে। পদ্মা, তিস্তা এখন মৃতপ্রায়, যুমনায় পড়েছে চর। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা দখল, ভরাট ও দূষণেরভারে বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলছে।

দেশে পানি সংকটের শঙ্কা তুলে ধরে এম এ ওয়াহেদ বলেন, দেশে পানি সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে এবং নৌ চলাচল, সেচ ব্যবস্থা ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। নদীতে পানি কমে যাওয়া বা না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানি কমে যাওয়া এবং নদী হারিয়ে যাওয়ার কারণে ভূপরিস্থ কিংবা ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিনিয়ত নিচে নেমে যাচ্ছে। ২০২০-২১ সেচ মৌসুমে সারাদেশে সেচকৃত জমির পরিমাণ ৫৬.৫৪ লাখ হেক্টর। ফলে বিপুল জনগোষ্ঠির খাদ্য চাহিদা পূরণে সেচ কাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, অতিমাএায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর, বাড়ছে ঝুঁকি। কোন কোন এলাকায় সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

এছাড়া অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, ব্রিজ, বাঁধ-নির্মাণসহ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে নদী বাহিত পলি প্রবাহের কারণে পানি সাগরে যেতে না পারায় নদীর তলদেশ ভরে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে নদীর নব্যতা। নদী নব্যতা হারিয়ে হাজার হাজার কিলোমিটার নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। উত্তরাঞ্চলের নদীসমূহ শুষ্ক বালুচরে পরিণত হচ্ছে বলে যোগ করেন তিনি।

দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষের আবাস রাজধানী ঢাকায়। এ সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। জনসংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে পানির চাহিদা। আর ঢাকা ওয়াসা সেই চাহিদা মেটাতে ভূগর্ভস্থ পানিই বেশি কাজে লাগাচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে।

ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ২ মিটার করে নেমে যাচ্ছে। ১৯৭০ সালে ঢাকা শহরে ৬ মিটার মাটির নিচেই পানি পাওয়া যেত। ১৯৯৬ সালে ঢাকায় পানির স্তর ছিল ২৫ মিটারে, যা ২০০৫ সালে ৪৫ মিটার, ২০১০ সালে ৬০ মিটার এবং ২০২৪ সালে এসে ৭৫ মিটারে নেমেছে। ঢাকার ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদা মেটাতে ওয়াসার ১ হাজার পাম্প ছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপন করা অন্তত ২ হাজার গভীর নলকূপ দিয়ে প্রতিদিন ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হয়। শুধু ঢাকা ওয়াসাই প্রতিদিন প্রায় ৩৩ লাখ ঘনমিটার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে।

সুপারিশ সমূহ:

১. ভূপৃষ্টের পানি ব্যবহার ব্যবহারের বিষয়টি নগর পরিকল্পনা, বসতবাড়ী পরিকল্পনা বাধ্যতামূলকভাবে যুক্ত করা। ঢাকা ওয়াসা সব সকল নগরীতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নদী বা জলাশয়ের পানি ব্যবহারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে স্বল্প মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী মাস্টার প্লান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

২. প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব পানি ব্যবস্থাপনায় চাষাবাদ পদ্ধতির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা। কৃষি, শিল্পে ও ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ভূপরিস্থ পানি ব্যবহার জন্য বিভিন্ন মেয়াদী মহাপরিকল্পনা মাফিক অগ্রসর হওয়া জরুরি।

৩. শিল্প-কারখানার পানির অপচয় রোধে পানির পুনর্ব্যবহারের নিমিত্ত ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট) স্থাপনের মাধ্যমে পয়ঃপ্রণালি ও ময়লা-আবর্জনা মিশ্রিত পানি পরিশোধন করা।

৪. বৃষ্টির পানি সোককুপ এর মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৫. পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থায় আবাসিক/অনাবাসিক এলাকায় সেফটিক ট্যাংক ও সোককুপ স্থাপনের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।

৬. জলাধার রক্ষায় পানি আইনের কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

৭.পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষকে আগামী ২ বছরের মধ্যে ভূপৃষ্ঠের পানি ৯০% ব্যবহারের জন্য বাধ্য করা।

৮.নাগরিকদের মাঝে পানির গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।

৯.ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করা এবং অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তির লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

১০.খরা মৌসুমে সেচ ও রাসায়নিক সার নির্ভর ধান চাষের পরিবর্তে প্রকৃতি নির্ভর ধান চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

১১. অপরিশোধিত শিল্পকারখানায় বর্জ্য ও পয়:বর্জ্য, নৌযানের বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করা।

১২. ঢাকার আশেপাশের নদীসহ অন্যান্য সকল নদী ও জলাশয় দখল, ভরাট ও দূষণ রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

১৩. নদী দূষণমুক্ত করা। নদীর পানি কৃষিও শিল্পে এবং পরিশোধন করে খাবার পানি হিসাবে ব্যবহার করা।

১৪. নদীর প্রবাহ ও নাব্যতা যথাযথ রাখার লক্ষ্যে নদীতে পিলারসমৃদ্ধ ব্রিজের পরিবর্তে ঝুলন্ত ব্রিজ বা টানেল নির্মাণ করা।

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More