আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অষ্টমী, নবমী ও দশমী–এই তিন দিন সরকারি ছুটিসহ ৪ দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। পূজার নিরাপত্তা জোরদার, প্রতিমা ভাঙচুর বন্ধ এবং মন্দিরে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের দাবিও জানিয়েছে তারা।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় দাবিগুলো উত্থাপন করা হয়।
হিন্দু মহাজোটের ৪ দাবি:
১। দুর্গা পূজায় সরকারি ছুটি ৩ দিন (অষ্টমী, নবমী ও দশমী) করতে হবে।
২। প্রত্যেকটি স্থায়ী ও অস্থায়ী পূজা মন্দিরে সরকারি খরচে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থাসহ প্রতিটি মন্দিরে পূজার ১০ দিন আগে থেকে পূজা চলাকালীন সময় পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করা।
৩। গত বছরের মতো দুর্গা পূজায় সেনাবাহিনীর টহল দেওয়া
৪। পূজায় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি মনিটারিং সেল গঠন করা।
আলোচনায় লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মুখপাত্র ও নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর। দুর্গা পূজার মূল ৩টি দিনই হলো অষ্টমী, নবমী ও দশমী। এই উপলক্ষ্যে দিন–রাত পূজার কাজে ব্যস্ত থেকে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে সার্থকভাবে দুর্গা পূজা সম্পাদন করতে হয়।
তিনি বলেন, “দুর্গাপূজায় হিন্দু সম্প্রদায় বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার। কারণ ৫ দিনের পূজায় মাত্র ২ দিন সরকারি ছুটি, যার মধ্যে আগে ছিল একদিন বর্তমান সরকার এসে সেটা দু’দিন করেছে। কিন্তু আমাদের দাবি ছিল ৩ দিন। যার কারণে হিন্দু সম্পদায়ের অনেকেই দুর্গা পূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থেকে পূজার আনন্দ ও ধর্মীয় যজ্ঞ শেষ করতে পারে না। এমনকি পরিবার পরিজনের সঙ্গে পূজার আনন্দ ভাগ করে নিতে পারে না। তাই এবার থেকে দুর্গা পূজায় সরকারি ছুটি ৩ দিন (অষ্টমী, নবমী ও দশমী) করা হোক।”
তিনি আরো বলেন, “ইতিমধ্যে মন্দিরে প্রতিমা বানানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। দুর্গা পূজা ও নির্বাচন এই দুটি বিষয় নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের অতীত অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। এরই মধ্যে ৪টি জেলায় দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। পুজার আরও ১০ দিন বাকি এ হামলা ও ভাঙচুর আরও বাড়বে বলে আমরা মনে করছি। এরই মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সন্নিকটে। তাই এবার পূজা মণ্ডপ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের স্থাপনা সাম্প্রদায়িক শক্তির লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে এই উৎসবের নিরাপত্তা নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায় এখনই ভাবতে শুরু করেছে।“
পূজায় নিরাপত্তার শঙ্কা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২৫ সালের শারদীয় দুর্গা পূজা নিয়ে শঙ্কা বোধ করছি। সারা দেশব্যাপী পূজার আগে ও পরে এমনকি পূজা চলাকালীন সময়ে মন্দিরে হামলার আশঙ্কা করছি। কোন জায়গায় হামলা হতে পারে সেই সমস্ত জায়গাসহ সারা দেশে দুর্গা পুজার আগে ও পরে নিরাপত্তা জোরদার করার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রত্যেকটি স্থায়ী ও অস্থায়ী পূজা মন্দিরে ও মণ্ডপে সরকারি খরচে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থাসহ প্রতিটি মন্দিরে পূজার ১০ দিন আগে থেকে পূজা চলাকালীন সময় নিরাপত্তা জোরদার করার আহ্বান জানাচ্ছি।‘
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি ড. প্রভাস চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন– বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার দেবনাথ, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জোটের সভাপতি শ্যামল কুমার রায় প্রমুখ।