পাবনার ভাঙ্গুড়া ও আতাইকুলায় সম্প্রতি সংঘটিত দুটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
পৃথক দুটি হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ২ আসামিকে গ্রেপ্তারসহ হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও অস্ত্রসহ এক চরমপন্থি নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাবনা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন পাবনা পুলিশ সুপার (এসপি) আকবর আলী মুনসী।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন– ভাঙ্গুড়া উপজেলার রাঙ্গালিয়া পশ্চিমপাড়ার আতিকুর রহমানের ছেলে রিমন সরকার (২৮), আতাইকুলা থানার স্বরুপ পুরের কাজী আহম্মদে আলীর ছেলে আকমল হোসেন (৪৫) এবং আতাইকুলা থানার গয়েশবাড়ী এলাকার মৃত ময়েজ উদ্দিনের ছেলে চরমপন্থি নেতা রফিকুল ইসলাম (৪০)।
পুলিশ সুপার জানান, ভাঙ্গুড়ার চৌবাড়িয়া হারোপাড়ার মৃত সোবাহান সরদারের ছেলে হাসিনুর রহমান হাসু প্রথম স্ত্রী মানসিক অসুস্থ থাকায় পরিবারের সম্মতিতে ২য় বিয়ে করেন সাজেদা খাতুনকে। সম্প্রতি এক কন্যা সন্তানের জননী সাজেদা খাতুনকে তালাক দেন হাসু। কিন্তু স্বামীর সাথে ফের সংসার করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। এতে ব্যর্থ হয়ে এক কবিরাজের দেয়া তাবিজ ১৫ আগস্ট দিবাগত রাতে সাবেক স্বামী হাসুর বাড়িতে পুঁতে রাখতে বোন জামাই রিমন সরকারকে পাঠান তিনি। রিমান সেই তাবিজ হাসুর বাড়িতে পুঁতে রাখতে গিয়ে হাসুর হাতে ধরা পরে। হাসু তাকে পুলিশ তুলে দেয়ার কথা বললে তাকে লোহার শাবল দিয়ে পিটিয়ে এবং ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে নিহত হাসুর ঘরে সিঁদ কেটে রাখে রিমন। যাতে মানুষ মনে করে– চোর চুরি করতে এসে তাকে হত্যা করেছে। হত্যাকাণ্ডের মূল ঘটনা উদঘাটন করতে চেষ্টা চালায় পুলিশ। এক পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘাতক রিমনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তার দেয়া তথ্য মতে সেই তাবিজ, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত শাবল, দা ও রক্ত মাখা শার্ট ও লুঙ্গি টয়লেটের ট্যাংকি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আতাইকুলা থানার সাদুল্লাহপুরের দড়িশ্রীকোল এলাকায় আকমল হোসেন (৪৫) এবং জোসনা খাতুনের বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ক দেখে ফেলেন একই এলাকার আব্দুল কুদ্দুস (৫৫)। উক্ত ঘটনা এলাকার বিভিন্ন জনকে বলায় তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যা পরিকল্পনা করেন। এবং গত ৮ আগস্ট আকমলকে কৌশলে প্রেমিকা জোসনার বাড়ির পাশে ডেকে নিয়ে গামছার সাহায্যে ফাঁস দিয়ে হত্যা করেন। লাশটি গুম করে পাশের টয়লেটের সেফটিক ট্যাংকের ভিতরে রেখে আসেন। তথ্য প্রযুক্তি সাহায্যে ২১ আগস্ট ঝিনাইদহ থেকে গ্রেপ্তারের পর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন আকমল হোসেনে।
এছাড়াও আত্মসমর্পনের পরও বিভিন্ন সময় অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আতাইকুলা থানার গয়েশবাড়ি এলাকা থেকে রফিকুল ইসলাম নামের এক চরমপন্থি নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। অভিযুক্ত রফিকুল ৭টি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মো. মাসুদ আলম, সদর সার্কেল ডি,এম, হাসিবুল বেনজীর, সহকারী পুলিশ সুপার (এসএএফ) আরজুমা আকতার ও আতাইকুলা থানার ওসি হাফিজুর রহমানসহ জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা।
পাবনা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী বলেন, পরপর দুটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। অজ্ঞাতনামা আসামীকর্তৃক রাতের বেলা হত্যাকান্ড দুটি সংগঠিত হয়। একটি ঘটনা ভাঙ্গুড়ার চৌবাড়িয়ায় ঘটে অন্যটি আতাইকুলা থানায় ঘটে।
পুলিশ সুপার বলেন, নিহত হাসিনুর রহমান হাসুর প্রথম স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদের পর যখন দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই সম্পর্কেও বিচ্ছেদ ঘটলে তিনি একাকী থাকতেন। ১৫ আগস্ট দিবাগত রাতে অজ্ঞাতনামা আসামীকর্তৃক নিহত হন এবং তার মৃতদেহ মেঝেতে পরে থাকে। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এছাড়া তাবিজ, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত শাবল, দা ও রক্ত মাখা শার্ট ও লুঙ্গি টয়লেটের ট্যাংকি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় ঘটনাটি আতাইকুলা থানার নিহত কুদ্দুস কৃষি কাজ করতেন। আসামী আকমল এবং জোসনা বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ক দেখে ফেলেন কুদ্দুস। ৮ আগস্ট আকমলকে কৌশলে হত্যা করেন। লাশটি গুম করে পাশের টয়লেটের সেফটিক ট্যাংকের ভিতরে রেখে আসেন। তথ্য প্রযুক্তি সাহায্যে ২১ আগস্ট ঝিনাইদহ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শায়লা/দীপ্ত নিউজ