বেইজিংয়ে এটা ছিল আমার প্রথম সকাল। ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরেই রওনা হলাম থিয়েনআন মেন স্কয়ারের উদ্দেশ্যে। একটি ট্যাক্সি করে রওনা হলাম আমি ও আমার সফর সঙ্গীরা। সিআরআই মিডিয়া হোটেল থেকে মাত্র ৪০ মিনিট পর আমরা পৌছে গেলাম আমাদের গন্তব্য। ট্যাক্সি থেকে নেমেই চোখে পড়ল গেটের সামনে বিশাল লাইন। আমরাও লাইনে দাঁড়ালাম। লাইনের আশেপাশে যারা ছিল তারা নিজেদের আইডি কার্ড দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করছে। আমরা যেহেতু বাংলাদেশ থেকে গিয়েছি তাই আমরা পাসপোর্ট দেখিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম।
গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল হাজারো মানুষের ঢল। সবাই আসছে থিয়েন আনমেন স্কয়ার দেখতে। বিভিন্ন বয়সী পর্যটককের সাথে সাথে আমরাও হাঁটতে শুরু করলাম।যতই সামনের দিকে হাঁটছিলাম পরিচ্ছন্ন রাস্তা, গিংকো গাছের সারি দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম আমি।
একটু সামনে এগিয়ে চোড়ে পড়ল বিশাল জায়গা জুড়ে খোলা চত্ত্বর। মাঝখানে শোভা পাচ্ছে কৃত্রিম ফুলের আর্টওয়ার্ক। আর বিস্তৃত এই চত্তরের একদিকে চীনের মহা গণভবন, একদিকে ফরবিডেন সিটি ও অন্যদিকে ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ চায়না। আর মাঝখানে স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে চীনা সৈনিকদের স্তৃতিস্তম্ভ।
প্রাচীন শহরের গেটগুলোর মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা থিয়েনআনমেন স্কয়ার বেইজিংয়ের কেন্দ্রীয় অক্ষের ক্রস-সেকশনে অবস্থিত।এক সময় একে চংথিয়ান গেইট বলা হতো। মিং রাজবংশের সময়ে দুবার ধ্বংস হয়েছিল এই ঐতিহাসিক জায়গা। ১৬৫১ সালে ছিং রাজবংশের সম্রাট শুনচির রাজত্বের ৮ম বছরে পুলিন নামের এক সম্রাট বৃহৎ পরিসরে পুনর্নির্মাণ করেন এবং নাম পরিবর্তন করে রাখেন থিয়েনআনমেন স্কয়ার।
মিং রাজবংশ ও ছিং রাজবংশের সময়ে থিয়েনান মেন স্কয়ার ছিল সকল গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের প্রধান স্থান। বিশেষ করে যখন সম্রাটদের রাজ্যাভিষেক বা সম্রাজ্ঞী উপাধি প্রদানের জন্য রাজকীয় আদেশ জারি করা হতো। তাই বলা হয় চীনের আধুনিক ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে এই থিয়েন আনমেন স্কয়ার।
একসময় ফরবিডেন সিটি বা নিষিদ্ধ শহরের প্রধান ফটকের সামনে একটি উঠোন ছিল থিয়েন আনমেন স্কয়ার। সেই সময়ে এই জায়গার পরিধি ছিল ১ লাখ ১০ হাজার বর্গমিটার। রাজতন্ত্রের পতনের পর থেকে, বিশেষ করে গণপ্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার পর থেকে বহুবার সংস্কার করা হয়েছে এই চত্ত্বরটি। বর্তমানে ৮৮০ মিটার দীর্ঘ এবং ৫০০ মিটার চওড়ার এই চত্ত্বর ৪ লাখ৪০ হাজার বর্গমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত।
প্রতিদিন এই চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান। চীনকে ভালোবাসে এমন প্রত্যেকের বুকে প্রবল দেশপ্রেমের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে এই অনুষ্ঠান। প্রাচীন ইতিহাস, রাজনৈতিক তাতপর্য উপলব্ধি করতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিনই ভিড় করেন হাজারো পর্যটক। কেউবা পরিবার, কেউবা বন্ধু বান্ধবের সাথে ঘুরে বেড়ান এর চত্ত্বরে। ছবি তুলছেন ফুলের সাথে, স্মৃতিস্তম্ভের সাথে।
আমি নিজেও বেশ কিছু ছবি তুললাম। চত্ত্বরের বিভিন্ন প্রান্তে দাঁড়িয়ে নিজের কিছু ছবি তুলে সাক্ষী করে নিলাম নিজেকে।
এরপর আমরা গেলাম এই থিয়েনআন মেন স্কয়ারের ঢুকার গেটের বাম পাশের বেশ কয়েকটি দোকানে। সেখানে চীনের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন ব্যাগ, কাপড়, স্যুভেনির, এবং গহনা নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। অল্প দামে এসব দোকান থেকে জিনিস কিনতে পারছেন পর্যটকরা। তাদের সাথে আমিও ঘুরে দেখলাম চীনের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পণ্য। কিনলাম নিজের পছন্দমতো বেশকিছু পণ্য।
দুই ঘণ্টার মতো সময় কাটিয়ে থিয়েনআন মেন স্কয়ারের পাশের একটি সাবওয়ে স্টেশন থেকে ফিরে এলাম হোটেলে। আর নিজের সাথে নিয়ে এলাম এক সমুদ্র স্মৃতি।
আফরিন মিম চীন ভ্রমণ পর্ব-১