একদিকে তীব্র গরম অন্য দিকে বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্যান বা এসি বন্ধ, এমন পরিস্থিতি সকলের জন্যই অসহ্য কষ্টের।
যেহেতু বিদ্যুৎ বিভ্রাট এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাই এই সমস্যা মোকাবেলায় মানিয়ে নেওয়া এবং বিকল্প উপায়গুলি সন্ধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তীব্র গরমের মাঝে বিদ্যুতবিহীন জীবন যেভাবে মানিয়ে নিতে পারেন:
১. ফোন নিয়মিত চার্জ করা উচিত:
আপনার ফোন আপনার যোগাযোগের প্রাথমিক মাধ্যম, বিশেষ করে জরুরী পরিস্থিতিতে। বিদ্যুতের এমন যাওয়া আসার মাঝে যেন আপনার ফোনে চার্জ থাকে তা নিশ্চিক করুন। সুযোগ পেলেই আপনার ফোন চার্জ করুন এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমিয়ে এর চার্জ সংরক্ষণ করুন। এছাড়াও পাওয়ার ব্যাংক ব্যবহার করলে তার চার্জ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করুন।
২. শিশু এবং বয়স্কদের জন্য চার্জার ফ্যানের ব্যবস্থা:
তীব্র গরম থেকে শিশু এবং বয়স্কদের মতো দুর্বল ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখুন। বাড়িতে আইপিএস বা জেনারেটরের ব্যবস্থা থাকলে তো কথাই নেই তবে যদি না থাকে সেক্ষেত্রে চার্জার ফ্যান সাশ্রয়ী সমাধান হতে পারে। আকারে বড় ফ্যানগুলো বর্তমানে তিন হাজার টাকা থেকে শুরু করে ছয় থেকে সাত হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
৩. রাতের জন্য চার্জার লাইট এবং মোমবাতি কেনা:
দিনের শেষে যখন অন্ধকার নেমে আসে তখন আলোর একটি নির্ভরযোগ্য উৎস থাকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ফোনেই এখন ফ্লাশ লাইট যুক্ত করা থাকে, তা ব্যবহার করেই অনেকটা সুফল পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য তার বদলে চার্জার লাইট স্বল্প দামে কিনে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও বাড়িতে বিকল্প হিসেবে মোমবাতি অবশ্যই রাখবেন।
৪. গরম এড়াতে দিনে কয়েকবার গোসল করুন:
গরম আবহাওয়ায় দিনে এখন দুই থেকে তিনবার গোসল আপনার শরীরের তাপমাত্রা কমাতে উল্লেখযোগ্যভাবে সাহায্য করতে পারে। প্রতিবার গোসল প্রাকৃতিক শীতলকারক হিসাবে কাজ করে এবং গরম থেকে তাত্ক্ষণিক পরিত্রাণ প্রদান করে। দিনে সর্বোচ্চ একবার মাথা ভিজিয়ে গোসল করতে পারেন। একবারের বেশি মাথা ভিজিয়ে গোসলে ঠান্ডা লেগে অসুস্থ হবার সম্ভবনা তৈরি হতে পারে।
৫. খোলা জায়গায় বা ছাদে পরিবারের সাথে সময় কাটানো:
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় বাড়ির আঙিনা, বারান্দা বা ছাদের মতো খোলা জায়গা আপনার পরিবারের সাথে সময় কাটান। গল্পগুজব করে সবার সাথে শীতল বাতাস উপভোগ করুন। বর্তমান সময়ে প্রায়শই ফোনের মাঝে বন্দী থাকি আমরা। পরিবারের খোঁজ নেয়া তেমন হয়ে ওঠে না। এই দূরত্ব দূর করতে এটি একটি ভালো সুযোগ। এর মাধ্যমে আপনার পরিবারের সাথে আপনার সম্পর্ক দৃঢ় করে তুলবে।
৬. আইপিএস বা সোলার সিস্টেম আপনার নতুন সঙ্গী হতে পারে:
আইপিএস ও সৌর বিদ্যুৎ এখন আর বিলাসিতা নয়। এর মাধ্যমে ফ্যান, লাইট চালানোর সাথে সাথে ডিভাইস চার্জ করার মতো প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকে। বাড়িতে শিশু এবং বয়স্কদের গরম থেকে বাঁচাতে এটি হতে পারে চমৎকার একটি সমাধান। প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুসারে এই প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করলে জীবন অনেকটাই সহজ হতে পারে এই বিদ্যুতবিহীন সময়গুলোতে।
৭. ঢিলেঢালা ও সুতির পোশাকে আরাম পাবেন:
বিদ্যুৎ ছাড়া তীব্র গরমে ঠান্ডা থাকার জন্য সঠিক পোশাক নির্বাচন করা অপরিহার্য। আলগা-ফিটিং, হালকা ওজনের এবং সুতির কাপড় বেছে নিন। এই কাপড়গুলো বাতাসকে আপনার শরীরের চারপাশে অবাধে চলাচলের সুযোগ দেয়, ঘাম সহজে শুকায় এবং একটি শীতলভাব নিয়ে আসে। গাঢ় রঙের পোশাক এড়িয়ে চলুন কারণ তারা বেশি তাপ শোষণ করে। হালকা রঙের পোশাক বেছে নিন।
৮. ফ্রিজে খাদ্য এবং ওষুধের দিকে আলাদা নজর দিন:
দীর্ঘক্ষণ ফ্রিজ বিদ্যুৎ ছাড়া থাকলে পচনশীল খাদ্য ও ওষুধ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এজন্য ফ্রিজে থাকা প্রতিটি কাঁচা বা রান্না করা খাবার ও ওধুষ যেন নষ্ট না হয় সেজন্য ব্যবস্থা নিন। ফ্রিজ যতটা সম্ভব ফাঁকা রাখার চেষ্টা করুন। বিদ্যুৎ না থাকলে যতটা সম্ভব ফ্রিজ না খোলার চেষ্টা করুন।
৯. প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার করুন:
নতুন ভাবে কাজের পরিকল্পনা সাজান। দিনের বেলায় যে কাজগুলো করা সম্ভব সেগুলো দিনের আলো থাকতেই শেষ করার চেষ্টা করুন। এতে রাতের বেলা বিদ্যুৎ না থাকলে পরিবারকে সময় দিতে পারবেন।
বিদ্যুতবিহীন তীব্র গরমের এই সময়টার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য সবারই সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োজন। মনে রাখবেন সঠিক পরিকল্পনা এবং মানসিকতায় আপনি যেকোন চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে আপনার সেরাটা করতে পারবেন।