লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত ‘মহিপুর সংযোগ সেতু‘ যেন মিনি সমুদ্র সৈকত। ঈদুল ফিতরের আনন্দ উপভোগ করতে প্রতি বছরের মতো এবারও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর এই এলাকা। সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদুল ফিতরের দিন থেকে হাজার হাজার মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে সরগরম নদী তীর।
তিস্তা নদী তীরে দর্শনার্থীদের সমাগমে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। দীর্ঘদিন পর নদীতে সামান্য পানি আসায় উচ্ছ্বাসিত শহর ও গ্রামের মানুষ। নদীর পানিতে যেন সাগরের ছোঁয়ায় ভাসছেন তারা। ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে দূরে কোথাও যেতে না পারলেও তিস্তায় এসে সমুদ্র ভ্রমণের অনুভূতি নিচ্ছেন।
এদিকে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তার দুই পাড়ে বসেছে অস্থায়ী শত শত দোকান। যেন মেলা শুরু হয়েছে। এছাড়া স্পিডবোড, পালতোলা নৌকা, নাগরদোলাসহ বিভিন্ন প্রকার আনন্দদায়ক রাইডে উঠে আনন্দ উপভোগ করছেন দর্শনার্থীরা।
সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, মহিপুর তিস্তা এলাকায় দূরদূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। বিভিন্ন স্থান থেকে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও মাইক্রোবাসে আসছেন তারা। তিস্তা পাড়ে চলছে আনন্দ–উল্লাস। এতে মহিপুর তিস্তা এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়।
মহিপুর তিস্তার বুকে স্পিডবোটে ও নৌকায় দ্রুত বেগে এপাশ থেকে ওপাশে ছুটে চলছেন পর্যটকরা। স্পিডবোট ও পালতোলা নৌকায় মাত্র ৫০ টাকায় তিস্তার বুকে ভাসছেন দর্শনার্থীরা। বড় বড় ঢেউ এসে ধাক্কা দিচ্ছে তিস্তার পাড়ে। ছিটকে আসা জলরাশির আনন্দে মেতে উঠছে সবাই। মহিপুর তিস্তার আনন্দের স্মৃতি হিসেবে ফ্রেমবন্দি করছেন প্রিয় মুহূর্তগুলো।
দর্শনার্থী জাকিয়া সুপ্তি বলেন, প্রতি বছর ঈদ ও নানান উৎসবে আমরা পরিবার–পরিজন নিয়ে মহিপুর তিস্তা এলাকায় ছুটে আসি। আমি আমার ছেলেমেয়েদের নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। এখানে এসে অনেক মজা করেছি। যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
আরেক দর্শনার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঢাকা শহরে গণ্ডির মধ্যে বসবাস করি। কোথাও যেতে পারি না। তাই ঈদে সন্তানদের নিয়ে মহিপুর তিস্তায় ছুটে আসছি। এতে বাচ্চারা অনেক আনন্দ পাচ্ছে।’
রংপুর থেকে আসা মেহেদী মিরাজ ও শ্রাবণী আক্তার বলেন, ‘নদীর বুকে ভাসমান বিলুপ্ত আশির দশকের বেশ কিছু পাল তোলা নৌকা দেখতে বেশ ভালো লাগে। এগুলো আমাদের মতো অন্যদেরও নজর কাড়ছে। আমরা ক্যামেরা ও মোবাইল ফোনে বেশ কিছু প্রিয় মুহূর্ত বন্দী করেছি।’
এরকম হাজার হাজার মানুষ ঈদ আনন্দে কিছুটা সময় কাটাতে মোটরসাইকেল, মিনিবাস, কার, মাইক্রোবাস, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে তিস্তার পাড়ে আসছেন।
স্থানীয়রা জানান, অত্র এলাকায় বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় প্রতি বছরের মতো এবারও হাজার হাজার মানুষ মহিপুর তিস্তায় এসে ঈদ আনন্দ উপভোগ করছেন। পর্যটক ও দর্শনার্থীদের আকর্ষণ বাড়াতে সরকারি সহায়তায় মহিপুর তিস্তার পাড়কে নতুন মাত্রায় সাজানো হলে এখান থেকে সরকারের কোষাগারে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আসবে। দিন বদলের এই যুগে বদলে যাবে নদী ভাঙন কবলিত মহিপুরের মানুষের জীবনযাত্রার মানও।’
তিস্তা নদীর মহিপুর এলাকায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে নিরাপত্তা টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।