আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে যে কলহ, বিরোধ আছে সেখানে দূতিয়ালি করা আমাদের কাজ নয়। আমাদের কাজ হচ্ছে সাংবিধানিকভাবে এবং সংবিধানের অধীনে যে আইনগুলো হয়েছে এর অধীনে নির্বাচনটাকে যেভাবে আয়োজন করা দরকার আমরা সেভাবে করব। তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে কি হবে না এ নিয়ে আমি যা দেখতে পাচ্ছি ১০–১৫ বছর ধরেই আন্দোলন হচ্ছে।‘
রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা এ পর্যায়ে সমীচীন হবে না। ভয়েস অব আমেরিকার পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন শতরূপা বড়ুয়া।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার দাবি করেন, ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভোটারদের ভোট দেওয়ায় নিরুৎসাহ করতে পারে বা নির্বাচন প্রতিহত করার পক্ষে কোনোরকম সভা–সমাবেশসহ রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিতে বলেছে, তাতে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় না। নির্বাচনি প্রচারে যারা অংশ নেবেন তাদের সঙ্গে যারা নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন তাদের সম্ভাব্য সহিংসতা এড়াতেই এ নির্দেশনা তারা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তারা যদি শান্তিপূর্ণ সভা–সমাবেশ করেন সে বিষয়ে কিন্তু বলা হয়নি। নির্বাচন বিঘ্নিত করতে পারে বা নির্বাচনের বিপক্ষে, নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে পারে এ ধরনের সভা–সমাবেশ থেকে নিবৃত্ত করার বিষয়ে বলা হয়েছে। তারা বয়কট করে যাচ্ছে দুই বছর বা ১০ বছর ধরেই। সেখানে তো বাধা দেওয়া হয়নি। কিন্তু এ সময়ে এটা কিন্তু খুব ক্রিটিক্যাল। সেজন্যই শুধু কয়েকটা দিনের কথা বলা হয়েছে। এ সময়টাতে যেন প্রতিপক্ষের এমন কোনো সভা–সমাবেশ না হয়, যাতে পক্ষরা সংঘর্ষে, সহিংসতায় জড়িয়ে পড়তে পারে। সেদিক থেকে আমরা এ বিষয়টা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে এনেছি এবং তাদের অনুরোধ করেছি তারা যেন বিষয়টি দেখে। ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন যারা বর্জন করছে, বিএনপি ও সমমনা দলগুলো, জামায়াত ও কিছু ইসলামপন্থি দল এদের সম্মিলিত ভোট বাংলাদেশের ভোটব্যাংকের প্রায় ৪০ শতাংশ। এ বিপুলসংখ্যক ভোটারকে তাদের পছন্দমাফিক প্রার্থী নির্বাচন থেকে বঞ্চিত রেখে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি আউয়াল বলেন, ‘না। এ কারণে নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
নিরপেক্ষতা তখনই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, যখন গোপনে কোনোরকম কারচুপির সঙ্গে আমরা সংযুক্ত হব। যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা কেউ বলছেন না যে নির্বাচন কমিশন নৌকাকে সমর্থন করবে বা তারা গোপনে নৌকার পক্ষে কাজ করবে। এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু বিএনপি বা সমমনা দলগুলো, তারা তো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। বিষয়টা পক্ষপাতিত্বের প্রশ্ন তখনই হতো যখন বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতমূলক হয় না। কারণ যে ৮ লাখ কর্মচারী নির্বাচন পরিচালনা করবে তারা সবাই ধারকৃত সরকারি কর্মচারী। তাদের ওপর নির্বাচন কমিশনকে নির্ভর করতে হবে। তারা যদি সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে জেলা প্রশাসক যারা রিটার্নিং অফিসার, পোলিং সেন্টারের ভিতরে যারা ভোট গ্রহণ করবে তারা যদি সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে, ভয়ভীতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ করে এবং সেটার দেখভাল করে তাহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে না।’
নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ভিসা নিষেধাজ্ঞা পলিসি কোনো ভূমিকা রাখবে কি না– এ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমার এ ব্যাপারে কোনোরকম মাথাব্যথা নেই বা কোনোরকম আমার ওপরে চাপ নেই। নির্বাচন কমিশন এ নিয়ে একেবারে মাথা ঘামায় না। সরকারের ওপর কোনো চাপ আছে কি না আমি বলতে পারব না।
আরও পড়ুন: নির্বাচন নিয়ে বিদেশীরা কোন চাপ দেয়নি: নির্বাচন কমিশনার
আল/ দীপ্ত সংবাদ