আমি নাফিসা তাবাসসুম, এবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক ইউনিটে মানবিক বিভাগ থেকে ১ম স্থান অধিকার করি, গ ইউনিটে ৪র্থ স্থান অধিকার করি এবং খ ইউনিটে ২৩ তম স্থান অধিকার করি। এছাড়া জাবির বি ইউনিটে ৯ম, বিইউপিতে ২৮ তম স্থান অধিকার করি।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতির উদ্দেশ্যে মফস্বল থেকে এইচএসসি শেষ করে স্বপ্নের শহর ঢাকায় এসে ভর্তি হই ইউসিসি কোচিং এ। শুরুর দিকে কোনো ভাবেই নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছিলাম না, বারবার মনে হচ্ছিলো আমি হেরে যাবো। নটর ডেম কলেজ, হলিক্রস কলেজ সহ টপ টপ কলেজের স্টুডেন্টদের কথা শুনে প্রায়ই হতাশ হয়ে পড়তাম।
সেসময় সোস্যাল মিডিয়ায় শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ছবি, ভিডিয়ো দেখতাম। কত রাত যে নির্ঘুম কেটেছে এই ঢাবির স্বপ্নে বিভোর থেকে, তা বলে বোঝানো অসম্ভব। ভাইয়া/আপুদের মোটিভেশনাল কথা শুনতাম আর মনে হতো, আমিও যদি এখানে পড়তে পারতাম!
যেহেতু এডমিশন প্রিপারেশনের জন্য খুবই সামান্য সময় থাকে, আর প্রস্তুতি নিতে হয় পাহাড় সমান, তাই সময়ের সাথে সাথে আরো বেশি ভেঙ্গে পড়ছিলাম। হঠাত ভাগ্য বশত মুহায়মেনুল স্যারের একটা ক্লাস পাই। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়েরই একজন প্রাক্তন স্টুডেন্ট। আমার স্পষ্ট মনে আছে, প্রথম ক্লাসে তিনি দ্য আলকেমিস্ট বই থেকে একটা কথা বলেছিলেন, ‘‘When you want something, the whole universe conspires in helping you to achieve it.’’ আপনি যখন কিছু চান, সমগ্র মহাবিশ্ব আপনাকে তা অর্জনে সহায়তা করার জন্য ষড়যন্ত্র করে।
এই কথাটা শুনে আমার কেমন একটা মোটিভেশন কাজ করে। মনে হয় পৃথিবীতে সব কিছুই সম্ভব। শুধু আমাদের চাইতে হবে এবং সেভাবে কাজ করতে হবে।
সেদিন ক্লাসের পর আমি স্যারের সাথে দেখা করি এবং আমার ঢাবিতে পড়ার স্বপ্নের কথা বলি। ভাইয়া হেসে বলেছিলেন, তুই অবশ্যই পারবি। যেকোন হেল্প লাগলে ভাইয়াকে তোর পাশে পাবি।
অচেনা একটা শহরে আমার মনে হচ্ছিলো এখানে আমার আরেকটা ভাই পেয়েছি। বিশ্বাস করেন, ভাইয়াকে কতো জ্বালিয়েছি তার হিসাব নাই। দিন–রাত যখন–তখন লেখাপড়া সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় পড়লে ভাইয়ার থেকে বুঝে নিতাম।
ধীরে ধীরে কনফিডেন্স বাড়তে শুরু করলো। যেই আমি ক’দিন আগেও ভীতু হয়ে বসে থাকতাম চুপচাপ করে, এখন আমি একের পর এক টপ করতে থাকি কোচিং এ। শেষ যেদিন ক্লাস করি কোচিং এ ফেরার সময় মুহাইমিন ভাইকে সালাম করে এসেছিলাম। ভাইয়া বলেছিলেন, ‘আমি হাজার হাজার স্টুডেন্ট পড়াই প্রতি বছর। কিন্তু তোর মতো স্বপ্নবাজ স্টুডেন্ট আমি আর দেখি নাই। অনেক ফার্স্ট বানিয়েছি এই ক্লাসরুম থেকে, তাই কাউকে দেখলে বলে দিতে পারি তার ভবিষ্যত। দেখিস তুই টপ–১০ এ থাকবি!
আমি হাসি দিয়ে চলে আসি সেদিন। তারপর শুরু হয় ভর্তি যুদ্ধ। বিইউপিতে ২৮ তম, জাবিতে ৯ম, ঢাবির ৩ ইউনিটে ১ম, ৪র্থ, ২৩ তম হই। এক অগোছালো মেয়ে যে এভাবে গুছিয়ে নিয়ে আসতে পারবে, ভাবতেই পারিনি।
১ম হয়ে সবার আগে মুহাইমিন ভাইকে কল করে বলি, ভাই মনে আছে প্রথম দিনের সেই কথা, When you want something, the whole universe conspires in helping you to achieve it?
ভাই হেসে বলে, “মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়!”
জুনিয়রদের প্রতি একটাই কথা, “স্বপ্ন দেখো আর ভালো একজন মেন্টরের গাইডলাইনে প্রস্তুতি নিতে থাকো! দেখবে, এডমিশন জার্নিটা আসলেই খুব বেশি কঠিন কিছু না। ইনশাল্লাহ একদিন তোমার স্বপ্নও সত্যি হবে!”
আল / দীপ্ত সংবাদ