বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে এক সময় বলা হতো মসজিদের শহর। কখনো আবার রিকশার শহর, যানজটের শহর বা জাদুঘরের শহর নামেও পরিচিতি আছে এই শহরের। কিন্তু বর্তমানে এসব ছাপিয়ে ঢাকার পরিচিতি হয়ে উঠেছে দাবীর শহর।
এসব দাবির কোনো কোনোটির যৌক্তিকতা থাকলেও বেশিরভাগ দাবীকে অযৌক্তিক ও ভোগান্তিমূলক মনে করেন রাজধানীর সাধারণ মানুষ থেকে সরকারের নীতিনির্ধারকেরাও।
জেনে আসি, ঢাকা কেন দাবির শহর?
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, তখনই বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার দাবি নিয়ে রাজপথে নামে রাজধানীর তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সড়ক আটকে মিছিল, অবস্থান, বিক্ষোভের পাশাপাশি মহাখালীতে ট্রেনেও পাথর ছুঁড়ে হামলা চালানো হয়। সড়কে তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। চরম যানজটের কবলে পড়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক। তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচিত হয়।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে অনেকদিন ধরেই। সাত কলেজের জন্য ‘স্বতন্ত্র পরিচয়’ নিশ্চিতের জন্য তারা বিক্ষোভ করে রাজধানীর নিউমার্কেট ও সায়েন্সল্যাব এলাকায়।
শিক্ষর্থীদের অভিযোগ, অধিভুক্তির সাত বছরে রাজধানীর সাত কলেজে মানোন্নয়নের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি বেড়েছে। শিক্ষক ও ক্লাস রুম সংকট, ফল প্রকাশে বিলম্ব, গণহারে ফেল করিয়ে জরিমানা আদায়ের অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। তাদের আন্দোলনের কারণে মাঝে মাঝেই সড়কে তৈরি হয় ভোগান্তি।
এদিকে, নতুন করে সংঘর্ষে জড়িয়েছে রাজধানীর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। যে কারণে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা। কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ছাত্রদের এই আন্দোলনের মধ্যেই রাস্তায় নামে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকেরা। সম্প্রতি অটোরিক্সার ধাক্কায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে রাস্তায় নেমে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তি পড়ে সাধারণ মানুষ।
তবে সোমবার ঢাকা মহানগর এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের আদেশ এক মাসের জন্য স্থগিত করেছে। আশা করা যায়, আপাতত এই আন্দোলন থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা সরে আসবেন।
এসব আন্দোলনে বাইরেও সাভার–আশুলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা নানা দাবিতে আন্দোলন করছে। এতে সড়কে তৈরি হচ্ছে ব্যাপক যানজট। এর প্রভাব পড়ছে রাজধানীবাসীর প্রতিদিনের যাপনে।
সবমিলে ঢাকা এখন দাবির শহরে পরিণত হয়েছে।