বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের আন্দোলন। যার মধ্য দিয়ে এসেছে মায়ের ভাষার স্বীকৃতি।
মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই নির্দেশনা দিয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরও (মাউশি)। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ ৭২ বছর পরও ঠাকুরগাঁওয়ের ৬৪৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গড়ে ওঠেনি শহীদ মিনার।
জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, জেলায় ৩৭৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে এর মধ্যে ২২১টি বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার। অপরদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৯৯৮টি যার মধ্যে ৪২৫টি বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার। তাদের দাবি নিজ প্রতিষ্ঠানে নিজ অর্থায়নেই শহীদ মিনার করার জন্য রয়েছে নির্দেশনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ২১শে ফেব্রুয়ারিতে নিজ প্রতিষ্ঠানে কোনো আনুষ্ঠানিকতা না থাকায় অনেক শিক্ষার্থীদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দিনটির গুরুত্ব। কিছু প্রতিষ্ঠানে ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিতে শহীদ মিনারে ফুলে দেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে যায় দূর দূরান্তে। তাই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দাবি নিজ বিদ্যালয়ে একটি শহীদ মিনারের।
ঠাকুরগাঁও ইসলাম নগর উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র সাজেদুল বলেন, অনেক স্কুলে দেখেছি ২১শে ফেব্রুয়ারিতে তারা নিজেদের স্কুলে ফুল দিচ্ছে। কিন্তু আমাদেরকে ফুল দিতে অনেক দূরে যেতে হয়। আমাদের স্কুল শহীদ মিনার না থাকায় অনেক ছাত্রছাত্রী ফুল দিতে যায়না।
আরও পড়ুন: একুশে ফেব্রুয়ারিতে ৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে: ডিএমপি কমিশনার
১০ম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী অহনা ইসলাম বলেন, আমি কোনোদিন শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাইনি। কারণ আগে আমাদের স্কুল থেকে দূরের শহীদ মিনারে ফুল দিতে যেতো। তখন আমার বাসা থেকে এতদূরে যেতে দিতোনা। এখনতো আর স্কুল থেকে ফুল দিতে যায়না। আমাদের স্কুলে একটা শহীদ মিনার হলে অনেক ভালো হতো।
ঠাকুরগাঁও ইসলামনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রদান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে অনেক বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার। এতে শহীদ মিনারে ফুল দেয়ায় অনিহা সৃষ্টি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মাঝে।
তিনি বলেন, আগে আমরা সরকারি কলেজে ফুল দিতে যেতাম। তবে সরকারি কলেজের রাস্তা অনেক দূরে। ২০২০ সালে ফুল দিতে যাওয়ার সময় একজন ছাত্র সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়। এর পর থেকে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের আর ফুল দিতে যাওয়ার অনুমতি দেয়না। তাই ২০২০ এর পর থেকে আমাদের বিদ্যালয় থেকে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়া হয়নি।
এই বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা শিক্ষা অফিসার শাহিন আখতার বলেন, নিজ অর্থায়নে বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার তৈরীর বিষয়ে বিদ্যালয় কতৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর বেশি আমাদের কাছে আর কোনো সুযোগ নেই।
হিমেল / আল / দীপ্ত সংবাদ