শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪

টেনেটুনে চলছে রবির স্বপ্ন, প্রয়োজন সাহায্যের হাত

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার ব্লুমস বিশেষায়িত বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠিতা ছিলেন রবিউল করিম। রবিউলের স্বপ্নে গড়া এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে আর্থিক সংকটে রয়েছে; প্রতিষ্ঠানটি সচল রাখতে প্রয়োজন সাহায্যের হাত।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার আটিগ্রাম ইউনিয়নের বাসাইল গ্রামে সবুজে ঘেরা রবিউল করিমের মায়ের দেওয়া ২৯ শতাংশ জায়গার উপর গড়ে উঠেছে একতলা পাকা ভবনের ব্লুমস বিশেষায়িত বিদ্যালয়। পাশেই একটি চৌচালা টিনের ঘর। ২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এ চৌচালা এ টিনের ঘর থেকে ১১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল শহীদ রবিউল করিম। ধীরে ধীরে এটি প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পায়। রবিউলের অক্লান্ত পরিশ্রমে তার সঙ্গে এ যাত্রায় যোগ দেন মানবিক এক ঝাঁক বোধসম্পন্ন বন্ধুরা। পরবর্তীতে সম্মিলিত ভাবে এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করা শুরু হয়।

প্রতিষ্ঠানটিতে ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি, সিলেকটিভ নিউট্রিজম, অটিজম, স্পিস আ্যান্ড হেয়ারিং, ইন্টেলেকচুয়াল ডিজঅর্ডার, ফিজিক্যাল ডিজাবলিটি, ডিমেনশিয়াসহ বিভিন্ন শাখায় ৭২ জন শিক্ষার্থী শিক্ষা নিচ্ছে। পাশাপাশি প্রয়োজন অনুসারে চিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে। থেরাপি দেওয়ার কাজ করছেন দুইজন ফিজিও থেরাপিস্ট, স্পিচ আ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট, ইশারা ভাষা প্রশিক্ষক কাজ করছেন। এছাড়া দাপ্তরিক কাজের জন্য রয়েছেন হিসাবরক্ষক।

বাচ্চাদের স্কুলে আনা নেওয়ার জন্য রয়েছে দুইটি ভ্যান। চালু রয়েছে মিডডে মিলও। আর এই সবকিছুই শিক্ষার্থীরা পান বিনা বেতনে।

ব্লুমসের এ অগ্রযাত্রায় ধাক্কা লাগে ২০১৬ সালেন পহেলা জুলাই। এই দিনে ব্লুমসের প্রতিষ্ঠাতা রবিউল করিম দায়িত্ব পালনকালে গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গিদের হাত থেকে জিম্মিদের উদ্ধার করতে গিয়ে স্লিন্টারের আঘাতে শাহাদাত বরণ করেন।

নৃশংস বর্বরোচিত সেদিনের ঘটনায় সমগ্র জাতি স্তব্ধ হয়ে গেছিলো। রবিউল করিম সেসময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

ব্লুমস বিশেষায়িত বিদ্যালয়ের একতলা ভবনটিতে তিনটি কক্ষ। যার একটিতে শ্রেণিকক্ষ, অপরটিতে থেরাপি ও অন্যটিতে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রশাসনিক কক্ষের দেয়ালে ছড়িয়ে রয়েছে রবিউলের বিভিন্ন সময়কালের ব্লুমসের প্রতি তার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির নানা উপাদান। দেয়ালে সাঁটানো রয়েছে একটি কবিতা। যেখানে রবিউলকে নিয়ে লেখা রয়েছে

জীবনের অধিক মৃত্যু হয় যার

মনে রাখে তাকে বিপুল সংসার

এই দেশে তাই তোমার মুখচ্ছবি

নীশিথের চাঁদ

দিবসের রবি।

তুমি রবিউল করিম, তুমি বীর

তুমি না মায়ের

না ভায়ের

না স্ত্রীর

তুমি মহাকালের মহা সন্তান

তুমি নিলে তাই

স্বর্গ হৃদয়ে স্থান।

এই কবিতার মতো ব্লুমসের সকল সদস্য ও শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে রবিউলের জায়গা করে নিয়েছে বেশ জোরালোভাবে। তাকে নিয়ে গর্বিত সবাই।

বিদ্যালয় চটপটে বালক আলমগীর হোসেন (২২)। কখনও খাবার আনছে, কখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বারান্দা পরিষ্কার করছে, অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে, খাবারের আয়োজন করছে। কিন্তু তার মুখে কোনো ভাষা নেই। কথা বলতে জানে না।

একসময় ব্লুমসের শিক্ষার্থী ছিল সে। বয়স বাড়লে তাকেই প্রতিষ্ঠানটির সহকারী হিসেবে কাজ দেওয়া হয়। তার মতো বাক ও শ্রবণে অপারগ এমন আরও সাতজন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন পেশায় স্বাভাবিক জীবনধারায় ফিরে এসেছে।

আফসানা আক্তার জানায়, সে সেরিব্রাল পালসি রোগে আক্রান্ত। ১৭ বছর বয়সী আফসানা ব্লুমসে যখন আসে তখন তার বয়স ছিল পাঁচ বছর। আফসানা রবিউলকে চিনতো বড় স্যার হিসেবে। সে বলে, বড় স্যার থাকলে আমাগো আরও ভালো হইতো। স্যার আমাগো অনেক আদর করতো। স্যার স্কুলে আইসা আমাগো সাথে বইসা ক্লাস করতো। স্যাররে আল্লা ভালো রাখুক।

রবিউলের স্বপ্নে গড়া এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে আর্থিক সংকটে রয়েছে। প্রতিমাসেই শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বেতন দিতে হিমসিম খাচ্ছে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ। নানা জনের কাছ থেকে চেয়ে চেয়ে মেটানো হচ্ছে আর্থিক সংকট। তবে সাময়িকভাবে এ সংকট মোকাবিলা করা গেলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ চিন্তিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা।

ব্লুমস বিশেষায়িত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ছোট্ট একটি টিনের ঘর থেকে এগারোজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে স্কুলের যাত্রা শুরু করেছিলেন শহীদ রবিউল। এখন এখানে ৭২ জন শিক্ষার্থী। সকলকে বিনামূল্যে শিক্ষা, শিক্ষা উপকরণ, দুপুরের খাবার, পোশাক ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখানে প্রতিমাসে প্রায় একলাখ টাকা ব্যয় হয়। তবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে গিয়ে প্রতিমাসে অর্থের সংকুলান করতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে এই পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সমাজের মূলধারার যুক্ত করার কার্যক্রমটি সচল রাখা সহজ হবে।

ব্লুমস কাটিগ্রামের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সচিব শামসুজ্জামান শামস বলেন, ব্লুমস আমাদের সকলের প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটির সফলতার মধ্য দিয়ে রবিউলের স্বপ্ন বাস্তবে রুপ পাবে। তবে বর্তমানে স্কুলটি পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে। এজন্য সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।

জাহিদুল হক চন্দন/ শায়লা/ দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More